Thursday, November 28, 2024

Street Food Paradise: A tour of Kolkata’s street food stalls.

 স্ট্রিট ফুড প্যারাডাইস: কলকাতার রাস্তার খাবারের স্বর্গরাজ্যে ভ্রমণ

কলকাতা, শহরটির প্রতিটি গলি ও মোড়ে লুকিয়ে আছে সুস্বাদু রাস্তার খাবারের এক অসাধারণ জগৎ। এই শহরের স্ট্রিট ফুড শুধু খাবার নয়, এটি বাঙালির আবেগ, ঐতিহ্য এবং গল্পের বহিঃপ্রকাশ। কলকাতার স্ট্রিট ফুড সংস্কৃতি একদিকে যেমন স্থানীয় রান্নার ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে, তেমনই তা আজকের আধুনিক প্রজন্মের রসনাতৃপ্তির অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে।

কলকাতার স্ট্রিট ফুড: ইতিহাস ও ঐতিহ্য

কলকাতার স্ট্রিট ফুডের ইতিহাস বহু প্রাচীন। ব্রিটিশ আমলে যখন কলকাতা ছিল ভারতের রাজধানী, তখন থেকেই শহরে বিভিন্ন প্রদেশের মানুষের বসতি শুরু হয়। এই মিশ্র সংস্কৃতির ফলেই শহরের রাস্তার খাবারের এমন বৈচিত্র্য গড়ে উঠেছে। আজও সেই প্রভাব প্রতিফলিত হয় ফুচকা, চাউমিন, কाठी রোল, কিংবা ঘুগনির মতো খাবারে।

কলকাতার জনপ্রিয় স্ট্রিট ফুড

১. ফুচকা:

কলকাতার ফুচকার স্বাদ ভারতের অন্য যেকোনো জায়গার পানিপুরির থেকে আলাদা। তেঁতুলের জল, আলুর পুর এবং ঝাল মশলার অপূর্ব মিশ্রণ এই খাবারকে অপরাজেয় করে তুলেছে।কলকাতার ফুচকা সকলের প্রিয়।৮-৮০ সকলের পছন্দ ফুচকা।অফিস বা কলেজ ছুটির পর ফুচকার দোকানে দাড়িয়ে ফুচকা খেতে মন্দ লাগে না।

২.  কাঠিরোল:

১৯৩২ সালে নিজাম রেস্তোরাঁ থেকে কাথি রোলের যাত্রা শুরু। পরোটা ও মাংসের সংমিশ্রণে তৈরি এই খাবার এখন শহরের প্রতিটি কোণায় পাওয়া যায়।

                   Photo source: Google 

৩. ঘুগনি:

মটর ডালের ঘন মশলা দিয়ে তৈরি এই খাবার বাঙালির ঘরে ঘরে প্রিয়। লেবু, পেঁয়াজ, এবং কাঁচা লঙ্কা দিয়ে পরিবেশিত ঘুগনি চাটের স্বাদ অনন্য।

                      Photo source: Google 

৪. তেলেভাজা:

পেঁয়াজি, বেগুনি, ফুলুরি, আর চপের মতো টেলেভাজাগুলি বর্ষার দিনে চায়ের সঙ্গে বাঙালির নিত্যসঙ্গী।তাছাড়া রবীন্দ্র সরোবরে প্রিয়জনের সাথে বেগুনি খেতে খেতে গল্প করতে বেশ ভালই লাগে|এই বেগুনি খাওয়ানোর নাম করে আপনার বন্ধু আপনাকে পুরো সরোবর ঘুরিয়ে দিতে পারে কিন্তু শেষ পর্যন্ত বেগুনি পাবেন কিনা সেটা আপনার ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে।

                Photo source: Google 

৫. ঝালমুড়ি:

ঝালমুড়ি শুধু একটি খাবার নয়, এটি বাঙালির আড্ডার অংশ। মুড়ি, তেল, নুন, পেঁয়াজ, আর সর্ষে তেলের মিশ্রণে তৈরি ঝালমুড়ির স্বাদ কলকাতার প্রতিটি পার্কের বেঞ্চে পাওয়া যায়।

                     Photo source: Google 

৬. চাউমিন:

চিনের প্রভাব কলকাতার স্ট্রিট ফুডেও সুস্পষ্ট। কলকাতার চাইনিজ চাউমিন স্বাদের দিক থেকে আন্তর্জাতিক চাইনিজ নুডলসকে সহজেই হার মানায়।

                  Photo source: Google 

৭. মোগলাই পরোটা:

মোঘল আমলের রান্নার সঙ্গে বাঙালির সংযোগ মোগলাই পরোটা। ডিম, মাংসের কিমা, এবং মশলা দিয়ে ভরা এই পরোটা কলকাতার রাস্তার খাবারের অন্যতম জনপ্রিয় আইটেম।

                     Photo source: Google 

৮. শিঙাড়া আর সমোসা:

বাংলার শিঙাড়া আর উত্তর ভারতের সমোসার মিশ্রণ কলকাতার স্ট্রিট ফুডকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।

                     Photo source: Google

৯. কুলফি এবং মিষ্টি:

স্ট্রিট ফুড বলতে শুধু ঝাল নয়, মিষ্টির ভূমিকা অপরিসীম। রসমালাই, মিষ্টি দই, কুলফি ইত্যাদি খাবার কলকাতার মানুষের প্রিয়।

                    Photo source: Google 

কোথায় পাওয়া যায় সেরা রাস্তার খাবার?

১. ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল চত্বর:

ফুচকা, ঝালমুড়ি, এবং আইসক্রিমের জন্য বিখ্যাত।

২. পার্ক স্ট্রিট:

কাঠি রোল এবং মোগলাই পরোটার জন্য জনপ্রিয়।

৩. গড়িয়াহাট:

ঘুগনি, টেলেভাজা, আর চাউমিনের জন্য বিশেষ পরিচিত।

৪. ধর্মতলা:

বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি এবং কুলফির জন্য বিখ্যাত।

৫. কলেজ স্ট্রিট:

ঝালমুড়ি এবং চায়ের কাপ হাতে আড্ডার কেন্দ্রে পরিণত হয় এই এলাকা।

ডেকার্স লেন

দুই শতাব্দী আগে, জনৈক ফিলিপ মাইনার ডেকার্স এখানে খাবার নিয়ে তার নাবিক বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে আসতেন। এবং তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে, এই জায়গাটির নামকরণ করা হয়েছিল— ডেকার্স লেন। এই অঞ্চল কলকাতা শহরের খাদ্যবিলাসীদের স্বর্গ। কলকাতার সেরা স্ট্রিটফুডের সন্ধানে ভ্রমণকারী এবং ভোজনরসিকদের নিত্য আনাগোনা করতে দেখা যায় এই এলাকায়। আমিষ এবং নিরামিষ দুই ধরনের খাবারই মেলে এখানে। এবং তা একেবারেই পকেটে টান ফেলবে না আপনার। চাইনিজ , কন্টিনেন্টাল এবং ভারতীয়— যে কোনও স্বাদের খাবারেই মধ্যাহ্নভোজ বা জলখাবার সেরে ফেলতে পারেন এখানে।

ডালহৌসি স্কোয়্যার

অফিসপাড়া হিসেবে পরিচিত ডালহৌসি এলাকা লুচি ও আলুরদমের জন্য জনপ্রিয়। শহরের প্রধান ব্যবসায়িক কেন্দ্রগুলির মধ্যে একটি এই ডালহৌসি স্কোয়্যার বা বিবাদী বাগে রোজই অনেক মানুষজন দুপুরের খাবারের জন্য রাস্তার খাবারের স্টলে ভিড় করেন। সেরা খাবারের বিক্রেতারা আবার বসেন ফেয়ার্লি প্লেসের কাছে, রাইটার্স বিল্ডিংয়ের পিছনে এবং ব্যাঙ্কশাল কোর্টের কাছেই। আপনি এখানে লুচি, কচুরি এবং আলুদোম, ছোলার ডাল, ভাত এবং মাছের তরকারি থেকে শুরু করে মুঘলাই, পাঞ্জাবি চাইনিজ এবং অবিশ্বাস্য কমে দামে বিরিয়ানি পর্যন্ত খেতে পারেন।

যাদবপুরের এইট বি

যাদবপুর কলকাতার দক্ষিণ অংশে অবস্থিত এবং বিখ্যাত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সুপরিচিত। সাম্প্রতিক সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখানকার এইট বি মোড়ে অনেক খাবারের দোকান সব বয়সের মানুষের মন ভুলিয়ে রাখে। পাশের জনপ্রিয় বানজারা রেস্তঁরা হোক বা দক্ষিণ ভারতীয় খাবারের দোকান, এই অঞ্চলে ভিড় জমে থাকে দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত। এখানকার বিরিয়ানি ক্রমশ সারা কলকাতায় জনপ্রিয়তা পচ্ছে। এগরোলের আলু মিশিয়ে এই এলাকায় বিভিন্ন বিক্রেতা করেছেন মজাদার কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বা বাস-অটো স্ট্যান্ডের যাত্রীরা তো বটেই, স্টেশন থেকে নেমে মুখরোচক খাবারের সন্ধানে নিয়মিতই এইট বি মোড়ে এসে পৌঁছন আরও অনেক মানুষ। আড্ডা মারার জন্য তাঁরা কখনও কখনও এইটি-বি মার্কেটের উপরে কফি হাউসেও বসেন বইকি।

রুবির বাসিন্দা হিসেবে আমার মত : 

রুবি মোরে অনেক দোকান আছে। মোমো,চাউমিন, রোল,কাবাব সবই পাওয়া যায় আর দাম ও খুব একটা বেশি নয়।

কলকাতার রাস্তার খাবারের বৈশিষ্ট্য

১. বাজেটের মধ্যে বিলাসিতা:

রাস্তার খাবারের দাম সাধ্যের মধ্যে হওয়ায় এটি সবার কাছে জনপ্রিয়।

২. স্বাস্থ্যকর না হলেও সুস্বাদু:

অনেকেই রাস্তার খাবারকে স্বাস্থ্যকর মনে না করলেও, এর স্বাদ মানুষের হৃদয়ে বিশেষ স্থান করে নিয়েছে।

৩. উৎসবের সঙ্গে সম্পর্ক:

দুর্গাপুজো বা নববর্ষের মতো উৎসবে কলকাতার রাস্তার খাবার আরও বিশেষ আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।

কলকাতার স্ট্রিট ফুড: আড্ডা ও গল্পের সঙ্গী

কলকাতার স্ট্রিট ফুড শুধু খাওয়ার জন্য নয়, এটি বাঙালির আড্ডার অপরিহার্য অংশ। কলেজের বন্ধুত্ব, প্রেমের গল্প, কিংবা কর্মজীবনের ক্লান্তি— সবকিছুই রাস্তার খাবারের সাথে মিলেমিশে এক অনন্য অনুভূতির সৃষ্টি করে।

উপসংহার

কলকাতার রাস্তার খাবার শুধুমাত্র একটি খাবারের তালিকা নয়, এটি এই শহরের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, এবং আবেগের প্রতিচ্ছবি। কলকাতার স্ট্রিট ফুড শুধু শহরের মানুষের নয়, বরং বহিরাগত পর্যটকদেরও মুগ্ধ করে।

1 comment:

Essence of Pohela Boishakh: From Roots to Rhythms

পয়লা বৈশাখ: নবজীবনের উৎসব, বাঙালির আত্মার প্রতিচ্ছবি “এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ / তাপস নিশ্বাস বায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে”— রবীন্দ্র...