বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব হল দুর্গোৎসব। আমরা যাকে দুর্গোৎসব বলি অবাঙালিরা তাকেই নবরাত্রি বলে। এই নবরাত্রি সূচনা হয় মহালয়ার পরের দিন থেকেই এবং শেষ হয় আমাদের দশমী অর্থাৎ অবাঙালিদের দশেরার দিন। দুর্গা পূজার প্রত্যেক দিনেই রয়েছে অনেক নিয়ম ও আচার। দুর্গাপূজা প্রকৃতপক্ষে শুরু হয় সপ্তমীর দিন থেকে। এই সপ্তমীর সূচনা হয় নবপত্রিকা স্নান দিয়ে।
নবপত্রিকা প্রকৃতপক্ষে কি?
নবপত্রিকা মা দুর্গার এক বিশেষ অঙ্গ। নবপত্রিকা শব্দটির অর্থ হলো নয়টি গাছের পাতা। প্রকৃতপক্ষে পাতা নয় পুরো গাছটিকে প্রয়োজন হয়। নবপত্রিকার জন্য যে যে গাছগুলি প্রয়োজন হয় তা হল-
১. কদলী বা রম্ভা (কলা):
৩.হরিদ্রা(হলুদ):
এই সকল গাছগুলিকে( মূলসহ পাতা রয়েছে)শপত্র কলা গাছের সঙ্গে স্বমূলে একজোড়া বেলের সাথে সাদা অপরাজিতা গাছের লতা দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়। এবং তাকে লাল পাড় সাদা শাড়ি জড়িয়ে ঘোমটা দেওয়া হয় অনেকটা নববধূর আদলে। স্ত্রী রূপে তার পূজো হয়। স্ত্রী রূপের সঙ্গে দুটি বেল দিয়ে করা হয় তার স্তন যুগল। তারপর সিঁদুর দিয়ে সপরিবারে মা দুর্গার সঙ্গে তাকে পূজা করা হয়। দেবী প্রতিমার ডান দিকে দাঁড়িয়ে তার পূজো করা হয়। প্রচলিত ভাষায় এই নবপত্রিকাকে আমরা কলা বউ বলি। প্রকৃতপক্ষে গণেশের স্ত্রী কলা বউ নয়। গণেশের স্ত্রী এর নাম হল রিদ্ধি এবং সিদ্ধি। গণেশের দুই পুত্র রয়েছে যারা হলেন শুভ ও লাভ।
নবপত্রিকা পুজোর মূল কারণ:
প্রকৃতপক্ষে এই নবপত্রিকার মাধ্যমে মা দুর্গার ৯ টি রূপের পূজা হয়।
এই নবপত্রিকার রূপগুলি হল -
কাদলি বা রম্বা বা (কলাগাছ): কলা গাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী ব্রাহ্মণী।
কচু: কচু গাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী কালিকা।
হরিদ্রা বা হলুদগাছ: এর অধিষ্ঠাত্রী দেবী উমা।
জয়ন্তী গাছ: জয়ন্তী গাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী কার্তিকী।
বেল গাছ:বেল গাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী শিবা
ডালিম গাছ:ডালিম গাছের অধিক ধাত্রী দেবীর রক্তদণ্ডিকা
অশোক গাছ:অশোক গাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী শোকরহিতা
মানকচু গাছ: এই গাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবীর চামুণ্ডা
ধান গাছ: ধান গাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী লক্ষ্মী
মা দুর্গার এই নয় রূপের পূজা হয় কলা বউ অর্থাৎ নবপত্রিকার মাধ্যমে যেটি ছাড়া দুর্গাপূজা অসম্পূর্ণ। মহা সপ্তমীর দিন সকালবেলায় কাছাকাছি অবস্থিত কোন নদী বা জলাশয় নিয়ে যাওয়া হয় নবপত্রিকাকে স্নান করানোর উদ্দেশ্যে। পুরোহিত নিজের কাঁধে করে নবপত্রিকাকে নিয়ে যান। তার পেছনে ঢাকি তার ঢাক বাজাতে বাজাতে যান, তার সঙ্গে থাকে মহিলাদের শঙ্খ ও উলুধ্বনির শব্দ। শাস্ত্র বিধি অনুসারে স্নান করানোর পরে নবপত্রিকাকে নতুন শাড়ি পরানো হয় ও পূজা মন্ডপে নিয়ে এসে দেবীর ডানদিকে একটি কাঠের সিংহাসনের উপর তাকে স্থাপন করা হয়। মণ্ডপে কলা বউ প্রবেশের মাধ্যমে শারদীয়ার প্রথাগত সূচনা ঘটে। নবপত্রিকা প্রবেশের পর দর্পণে দেবীকে মহাস্নান করানো হয়। বাকি দিনগুলোতে নবপত্রিকাকে অন্যান্য দেবদেবীর ন্যায় পুজো করা হয়। নবপত্রিকা প্রবেশের আগে নবপত্রিকার সামনে দেবীকে চামুন্ডা রূপে পূজা করা হয়। আসলে মা দুর্গার প্রতীক হিসেবে নব পত্রিকার মাধ্যমে শস্য বধূকেই দেবীর প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করা হয় এবং প্রথমে তার পূজো হয়। কারণ শারদীয়ার দুর্গাপূজার মূলে বোধহয় এই শস্যদেবীরই পুজো প্রাচীনকালে প্রচলিত ছিল। পরবর্তীকালে দুর্গাপুজোর অন্যান্য নিয়মের সঙ্গে নবপত্রিকার স্নান এবং তার পূজো একাত্ম হয়ে গেছে।
শেষ পর্যন্ত দেখতে গেলে বিষয়টি হলো যে মা দুর্গা এবং শস্যদেবী একসঙ্গে মিশে গেছে। এই শস্য মাতা পৃথিবীর রূপভেদ। আমাদের দুর্গাপুজোর ভেতর দিয়ে আমরা সেই আদিমাতা পৃথিবীর পুজো করি|
দুর্গা পূজার মহাসপ্তমী বাংলা সংস্কৃতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। সপ্তমীতে প্রান প্রতিষ্ঠা হয়, যার মাধ্যমে দেবী দুর্গার মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এটি দেবীর পৃথিবীতে আগমন এবং মহিষাসুরের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সূচনা নির্দেশ করে, যা মন্দের ওপর ভালোর জয়ের প্রতীক। সপ্তমীর মাধ্যমে পূজার মূল আচার-অনুষ্ঠান শুরু হয়, যা পরবর্তী অষ্টমী এবং নবমীর সময় আরও জাঁকজমকপূর্ণ হয়। এই মহা সপ্তমীর বিশেষ ক্ষণে সবাইকে জানাই-"শুভ মহাসপ্তমী"
Interesting 💫❤
ReplyDeleteবেশ ভালো লাগলো লেখাটা পড়ে
ReplyDelete