Tuesday, October 1, 2024

Mahalaya:The Embarkment Of Durga Puja


আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোক-মঞ্জীর;

ধরণীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা;

প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমন বার্তা।


১.মহালয়ার পরিচিতি:


মহালয়ার ইতিহাস হিন্দু পুরাণ ও বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। এটি দুর্গাপূজার সাত দিন আগে পালিত হয় এবং দেবীপক্ষের সূচনা হিসেবে চিহ্নিত হয়। এই দিনটির বিশেষ তাৎপর্য হল, মহালয়ার দিন থেকেই দেবী দুর্গা কৈলাস পর্বত থেকে পৃথিবীতে তার সন্তানদের সঙ্গে আগমন শুরু করেন—গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী ও সরস্বতীকে সঙ্গে নিয়ে।



২. পুরাণের গুরুত্ব ও পিতৃপক্ষের অবসান


পিতৃপক্ষের একদম শেষে যে অমাবস্যার আবির্ভাব ঘটে সেই সময়কেই মহালয়া বলে। মহালয়া সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের প্রথমেই জানতে হবে  পিতৃপক্ষ কি? প্রকৃতপক্ষে পিতৃপক্ষ হল পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করার জন্য এক বিশেষ পক্ষ। এই প্রসঙ্গে মহাভারতের একটি গল্প প্রচলিত রয়েছে। কথিত আছে যে মৃত্যুর পর যখন দাতা কর্ণ স্বর্গে গিয়ে উপস্থিত হন তখন তাকে খাদ্য হিসেবে দেওয়া হয় স্বর্ণ ও রত্ন। এই দেখে দাতা কর্ণ খুবই বিস্মিত হলেন। তখন দেবরাজ ইন্দ্র কর্ণকে জানান যে তিনি সারা জীবন ধরে যে পরিমাণ দান করেছেন তার সবই ছিল স্বর্ণ ও রত্নের। তিনি তার পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে কখনো কোন খাদ্য দান করেননি। দেবরাজ ইন্দ্রের কথা শুনে কর্ণ নিদারুণভাবে লজ্জিত হন।  কর্ণের অনুতাপ দেখে  দেবরাজ ইন্দ্র কর্ণকে তার পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে দান ধ্যান অর্থাৎ তর্পণ করার জন্য ১৫ দিনের  জন্য মর্ত্যে পাঠিয়ে দেন। যে ১৫ দিন কর্ণ মর্ত্যে পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে দান করেছিলেন সেই ১৫ দিন সময়কে পিতৃপক্ষ বলে চিহ্নিত করা হয়। প্রকৃতপক্ষে এটিই হলো আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষ ,এটিকেই বলা হয় পিতৃপক্ষ। কৃষ্ণপক্ষের শেষ দিনটি হল অমাবস্যা। এই অমাবস্যার দিনেই পিতৃপুরুষেরা স্বর্গ থেকে মর্ত্যে নেমে আসেন, এবং তাদের বংশধরেরা তাদের পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করেন। পিতৃ লোকের সকল বিরহী আত্মা মর্ত্যলোকে নেমে আসে  এবং ঘটে তাদের মহা আলোয়। অর্থাৎ মহান যে আলোয়। কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যা তিথিতে মহান আলোয় পিতৃ তর্পনের মত মহৎ কাজ অনুষ্ঠিত হয় বলে একে মহালয়া বলে।





৩.মাতৃপক্ষ বা দেবীপক্ষের সূচনা: 


মহালয়া নিয়ে অপর একটি মতামত রয়েছে। যা সর্বজন গৃহীত ,সর্বজন চর্চিত ও সর্বজন গ্রাহ্য। মহালয়ার মানে পিতৃপক্ষের অবসান এবং মাতৃপক্ষের সূচনা, অর্থাৎ মহালয়া হলো পিতৃপক্ষ এবং মাতৃপক্ষের সন্ধিস্থল। মাতৃপক্ষের সূচনা বলতে গেলে আগে জানতে হবে মাতৃপক্ষ কি? মাতৃপক্ষ হল আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষ। এই সময় স্বয়ং রামচন্দ্র দেবী দুর্গার পূজা করেছিলেন। প্রাচীনকালে পুজো হতো বসন্তকালে। সুরত নামে এক রাজা ছিলেন যিনি বসন্তকালে প্রথম দুর্গাপুজোর প্রচলন করেছিলেন তাই দুর্গাপুজকে আমরা বাসন্তী পুজো নামেও চিনি। পুরানে উল্লেখ রয়েছে মাতা সীতাকে রাবণের হাত থেকে উদ্ধার করার জন্য রামচন্দ্র দেবী দুর্গার শরণাপন্ন হন এবং আশ্বিন কালে মা দুর্গার আরাধনা করেন যা অকালবোধন নামেও পরিচিত। এই সময়কেই দেবীপক্ষ বলে।এই দিন দুর্গা প্রতিমার চক্ষুদান করা হয়।


                                                              


৪. মহিষাসুরমর্দিনীর ইতিহাস:


মহালয়ার ভোরে দেবী শক্তির যে বর্ণনা আমরা শুনতে পাই তা মহিষাসুরমর্দিনী নামে পরিচিত। ১৯২৭ সালে ইন্ডিয়ান ব্রডকাস্টিং কোম্পানি ডালহৌসিতে বেতার কেন্দ্রটি স্থাপন করে। ইস্টার্ন রেলের চাকরি ছেড়ে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র এবং টাকশালের চাকরি ছেড়ে বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য সেখানে যোগদান করেন। এই বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য হলেন বাণীকুমার। যিনি মহিষাসুরমর্দিনী লেখেন। একদিন ওনারা বসে যখন গল্প করছিলেন এবং ভাবছিলেন নতুন কি অনুষ্ঠান করা যায় তখন হঠাৎ প্রেমাঙ্কুর আতর্থী পরামর্শ দেন বাণীকুমারকে কয়েকটি বৈদিক শ্লোক দিয়ে গান লিখে ফেলতে, রায়চান পড়ালকে বললেন সুর দিতে, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র কে বললেন শ্লোকগুলো বলতে। এরপরে বাণীকুমার চণ্ডী শ্লোকের ওপর ভিত্তি করে বসন্তেশ্বরী নামে একটি চম্পু রচনা করলেন। চম্পু  মানে যার কিছুটা পদ্য লেখা আর কিছুটা গদ্যে। এটি কিন্তু আশ্বিন মাসের দুর্গাপুজোর সময় প্রথম প্রকাশ হয় না, প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল বাসন্তী পূজার সময় যা ছিল পূর্বে বাঙ্গালীদের প্রধান পুজো। সেই সময় এটা ভীষণ পরিমাণে জনপ্রিয়তা পাওয়ায় ঠিক করা হয় যে শারদ উৎসবের সময়ও তা পুনরায় সম্প্রচার করা হবে। পরের বছর শারদ উৎসবে তা সম্প্রচার করা হলো ১৯৩২ এ। দুর্গাপূজোর ষষ্ঠীর দিন প্রত্যুষ প্রোগ্রাম নামে সম্প্রচার করা হলো।। রায়চান বড়াল ও পঙ্কজ মল্লিক সংগীত পরিচালক হিসেবে থাকলেন, ভাষ্যপাঠ করলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। পরের বছর যখন এই অনুষ্ঠান সম্প্রসারিত হলো তখন সে অনুষ্ঠানের নাম হলো প্রভাতী অনুষ্ঠান। ১৯৩৪ সালে প্রথমবার এই অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হলো মহালয়ার দিন। ১৯৩৭ সালে তার নাম দেওয়া হলো মহিষাসুরমর্দিনী। ১৯৭২ সালে স্থায়ী রেকর্ডিং হয় মহিষাসুরমর্দিনীর।


৫. সাংস্কৃতিক ও আবেগময় প্রভাব:


যে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র আর মহালয়া আজ একে অপরের পরিপূরক সেই বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহিষাসুরমর্দিনীতে থাকা নিয়ে একসময় প্রশ্ন উঠেছিল। একজন অব্রাহ্মণ  চন্ডীপাঠ করবে, সমাজ কি বলবে? শুধু অব্রাহ্মণের চণ্ডীপাঠই নয় যারা সে সময়ে যন্ত্র সঙ্গীতে ছিলেন তারা অনেকেই ছিলেন অবাঙালি। তাই মহালয়া আমাদের কাছে জাত পাতের ঊর্ধ্বে হয়ে ওঠে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা।




৬. আধুনিক সময়ে উদযাপন: 


বর্তমান সময়েও মহালয়া আমাদের কাছে ভীষণ পরিমাণে তাৎপর্যপূর্ণ। মহালয়ার দিন ভোর ৪টের সময় বাঙালির রেডিও কিম্বা মোবাইলের youtube এ বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের গলায় 

                "আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে     আলোক-মঞ্জীর;

                 ধরণীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা;

                প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমন বার্তা।"

শুনতে শুনতে শিহরণ দিয়ে ওঠে। এই ভাবেই হয় বাঙালির দুর্গোৎসবের সূচনা।



1 comment:

Psychological Flow While Reading Books: Exploring the Reader's Journey Through Bengali And English Classics and Poetry

  বই পড়ার সময় মনস্তাত্ত্বিক প্রবাহ: বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্যের প্রভাব এবং পাঠকদের মানসিক জগৎ ভূমিকা: বই পড়া মানেই কেবল গল্প বা জ্ঞান আহরণ ন...