Friday, October 11, 2024

Embracing Goodbyes: The Poignant Journey of Bijaya Dashami in Durga Puja

 বিজয়া  দশমী, যা বাংলার অন্যতম মহিমান্বিত দিন, দুর্গা পূজার শেষ দিন হিসেবে উদযাপিত হয়। এটি দেবী দুর্গার বিদায়ের দিন, যখন তিনি কৈলাসে ফিরে যান। বিজয়া দশমী শুধু দুর্গা পূজার পরিসমাপ্তি নয়, এটি শুভ শক্তির অশুভ শক্তির ওপর বিজয়ের প্রতীকও বটে। মহিষাসুর নামক রাক্ষসের বিনাশ এবং শুভ শক্তির পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রতীক হিসেবে দেবী দুর্গা এই দিনকে স্মরণীয় করে তুলেছেন।

 দশমীর পুরাণ-ভিত্তিক ইতিহাস:

হিন্দু পুরাণ অনুসারে, মহিষাসুর এক অমর রাক্ষস ছিল যাকে দেব-দেবতা সকলেই পরাস্ত করতে ব্যর্থ হন। এরপর, দেবতাদের সম্মিলিত শক্তি থেকে সৃষ্টি হয় দেবী দুর্গা। দশ দিন ধরে মহিষাসুরের সঙ্গে যুদ্ধ করে দশম দিনে তিনি তাকে বধ করেন। সেই দিন থেকেই বিজয়া দশমী দেবীর বিজয় উদযাপনের দিন হিসেবে পালন করা হয়। দেবীর এই বিজয় আসলে দুষ্টের দমন ও সৃষ্টির নতুন অধ্যায়ের সূচনা। বিজয়া দশমীর মাধ্যমেই মানুষের মনে নতুন করে শুভ শক্তির প্রতিষ্ঠা হয় এবং অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটে।

কেনো বিজয়া শব্দটি ব্যবহার করা হয়:

বিজয়া শব্দটির সঙ্গে মা দুর্গার মহিষাসুর বধের সাথে সাথে আরো একটি কাহিনী রয়েছে। রামচন্দ্র রাবণকে পরাজিত করার জন্যে যে অকাল বোধন করেছিলেন ষষ্ঠীর দিন শুরু সেই অকাল বোধনের শেষ দিন অর্থাৎ দশমীর দিন রামচন্দ্র রাবণের বিরুদ্ধে জয় লাভ করেন। তাই বিজয়া দশমী বা দশেরা।

বিজয়া দশমীর আচার-অনুষ্ঠান:

দুর্গা পূজার প্রথম থেকে দশমী পর্যন্ত প্রতিটি দিনেই নানা আচার-অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়, কিন্তু বিজয়া দশমীর দিনটি সবচেয়ে আবেগময়। এই দিনে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানানো হয়, যা “দুর্গা বরন” নামে পরিচিত।একে একে সকল মহিলারা মাকে পান,মিষ্টি,প্রদীপ দিয়ে বরণ করে। বিবাহিত নারীরা দেবী দুর্গার কপালে সিঁদুর লাগান এবং একে অপরকে সিঁদুর খেলা করেন। এই আচার নারীদের দীর্ঘজীবন, মঙ্গল, এবং শুভ কামনার প্রতীক। সিঁদুর খেলার মাধ্যমে নারীরা একে অপরের মঙ্গল কামনা করেন এবং দেবীকে শুভ বিদায় জানান। এর পর শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জনের পালা, যা সাধারণত নদী বা জলাশয়ে সম্পন্ন হয়। বিসর্জন পর্বটি দেবীকে পুনরায় তাঁর স্বর্গীয় বাসস্থানে ফিরে যাওয়ার প্রতীকী রূপ।




                        

সিঁদুর খেলার কারণ:

দশমীর দিন যে রীতির জন্য বাঙালি নারী অপেক্ষায় থাকে, সেটি হল সিঁদুর খেলা। সিঁদুর ব্রহ্মার প্রতীক। ব্রহ্মা জীবনের সমস্ত কষ্ট দূর করে আনন্দে ভরে রাখেন বলেই হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস করা হয়।ললাটে বা ভাগ্যস্থানে তিনি যাতে অধিষ্ঠিত থাকেন, তাই সিঁদুর পরার রীতি। মায়ের বিদায়বেলায় তাই স্বামীর মঙ্গল চেয়ে সিঁদুর খেলা। এখনও স্বামী বা বাড়ির কেউ কাজের জন্য বাইরে গেলে মা-কাকিমারা ‘দুগ্গা দুগ্গা’ বলেন। দুর্গতিনাশিনীকে স্মরণ করার সঙ্গেই জড়িয়ে আছে সিঁদুরের মাহাত্ম্য।অন্যদিকে লাল রঙটি পুরাণ মতে উর্বরতা, প্রেম ও আবেগের প্রতীক। তাই এয়ো স্ত্রীদের আচার অনুষ্ঠানে লাল রঙটি বারবার ফিরে আসে‌। লালপাড় সাদা শাড়ি। সাদা শাঁখা, লাল পলা। দশমীতে মা ফিরছেন তাঁর স্বামীর কাছে। তাই মাকেও লাল রঙে রাঙিয়ে বিদায় জানানোর রীতি প্রচলিত।অন্যদিকে একটি লৌকিক বিশ্বাসও রয়েছে দশমীর এই রীতি ঘিরে। মা দুর্গা তো আদতে বাড়ির মেয়ে। বাড়ির মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি পাঠানোর আগে মিষ্টিমুখ করাতে হয়‌। এরপর সিঁদুর ও আলতা পরিয়ে বিদায় জানানোর রীতি রয়েছে। সেই রীতিই মেনে চলা হয় বিজয়া দশমীতে‌।

বিজয়া দশমীর সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক তাৎপর্য:

বিজয়া দশমী কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক মিলনেরও দিন। বিজয়া দশমীর সময় ছোটরা বড়দের প্রণাম করে, এবং বড়রা ছোটদের আশীর্বাদ দেন। একে অপরকে আলিঙ্গন করে “শুভ বিজয়া” বলে অভিবাদন জানানো হয়। এই উৎসব মিষ্টিমুখ করে উদযাপিত হয় এবং নতুন করে সামাজিক বন্ধনকে শক্তিশালী করে তোলে। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন এবং পরিবার পরিজনের মধ্যে ভালোবাসা ও সম্প্রীতির বন্ধন আরও দৃঢ় হয়।


     

বিজয়া দশমী এবং বাঙালির আবেগ:

বিজয়া দশমী শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি বাঙালির মনের গভীরে প্রোথিত এক আবেগের উৎসব। দেবীর বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে একটি শূন্যতা এবং বিষণ্নতা ঘিরে ধরে।মায়ের বিদায়ের বেলায় সকলের চোখের কোনা জলে ভরে ওঠে, বুকের  ভেতরে সৃষ্টি হয় এক শূন্য স্থান।মা এর প্রতিমা দেখলে মনে হয় মা নিজেও কাঁদছেন।হয় বিসর্জন এই বলে - "আসছে বছর আবার হবে।"এই বলে একই সঙ্গে আগামী বছরের পূজার জন্য নতুন আশা জাগ্রত হয়। এই দিনটি বাঙালিদের জন্য বিশেষ, কারণ এটি শুধুমাত্র পূজার সমাপ্তি নয়, এটি তাঁদের সামাজিক বন্ধনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সময়। বাড়ি বাড়ি বিজয়ার মিষ্টিমুখ করতে যাওয়া, মিষ্টি বিতরণ করা, এবং একে অপরের সঙ্গে দেখা করা—এই সব কিছু মিলে বিজয়া দশমী বাঙালির জীবনে এক অনন্য আবেগের দিন হিসেবে পালিত হয়।

এভাবেই, বিজয়া দশমী শুভ শক্তির বিজয়, সামাজিক সংহতি, এবং নতুন শুরুকে চিহ্নিত করে।




1 comment:

Psychological Flow While Reading Books: Exploring the Reader's Journey Through Bengali And English Classics and Poetry

  বই পড়ার সময় মনস্তাত্ত্বিক প্রবাহ: বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্যের প্রভাব এবং পাঠকদের মানসিক জগৎ ভূমিকা: বই পড়া মানেই কেবল গল্প বা জ্ঞান আহরণ ন...