Monday, November 25, 2024

Psychological Flow While Reading Books: Exploring the Reader's Journey Through Bengali And English Classics and Poetry

 বই পড়ার সময় মনস্তাত্ত্বিক প্রবাহ: বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্যের প্রভাব এবং পাঠকদের মানসিক জগৎ

ভূমিকা:

বই পড়া মানেই কেবল গল্প বা জ্ঞান আহরণ নয়; এটি মানুষের মনের গভীর স্তরে এক আবেগঘন প্রবাহ তৈরি করে। মিহাই চিকসেন্টমিহাই-এর "ফ্লো স্টেট" ধারণা সাহিত্য পাঠের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। যখন পাঠক বইয়ের জগতে গভীরভাবে নিমগ্ন হন, তখন তারা সময় ও বাস্তবতার সীমানা পেরিয়ে কল্পনার এক মগ্ন অবস্থায় পৌঁছান। বাংলা সাহিত্যের ঐতিহ্য এবং ইংরেজি সাহিত্যের বিস্তৃত পরিসর পাঠকের মনকে নানাভাবে ছুঁয়ে যায়। এই নিবন্ধে বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্যের পাঠে মনস্তাত্ত্বিক প্রবাহের বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করা হবে এবং কীভাবে সাহিত্য পাঠককে মানসিক, আবেগীয় এবং দার্শনিকভাবে সমৃদ্ধ করে তার অনুসন্ধান করা হবে।

মনস্তাত্ত্বিক প্রবাহ বা ফ্লো স্টেট কী?

মনস্তাত্ত্বিক প্রবাহ এমন এক অবস্থা যেখানে পাঠকের মন পুরোপুরি বইয়ের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যায়।

উদাহরণস্বরূপ, জীবনানন্দ দাশের কবিতার ছন্দ বা শেক্সপিয়ারের নাটকের গভীর দার্শনিক প্রশ্ন পাঠককে বাস্তব থেকে বিচ্ছিন্ন করে এক নতুন মানসিক অবস্থানে নিয়ে যায়।

এটি একটি স্বতঃস্ফূর্ত অভিজ্ঞতা যেখানে পাঠক কোনও প্রচেষ্টা ছাড়াই বইয়ের গভীরে প্রবেশ করেন।

ফ্লো স্টেট তখনই ঘটে যখন:

1. চ্যালেঞ্জ ও দক্ষতার মধ্যে সামঞ্জস্য: বইটি যথেষ্ট জটিল কিন্তু পাঠকের বোধগম্যতার মধ্যে থাকে।

2. স্পষ্ট লক্ষ্য: গল্পের কাহিনী বা চরিত্রের মনস্তত্ত্ব এমনভাবে উপস্থাপিত হয় যে পাঠকের চিন্তার সঙ্গে মিলে যায়।

3. তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া: চরিত্রের আবেগ ও ঘটনার দ্রুত পরিবর্তন পাঠককে অবিরত ধরে রাখে।

বাংলা সাহিত্যে মনস্তাত্ত্বিক প্রবাহের দিক

কবিতা: ভাবনার গভীর সমুদ্র

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

রবীন্দ্রনাথের কবিতায় একটি অন্তর্লীন সুর ও ছন্দ রয়েছে যা পাঠকের হৃদয়কে ছুঁয়ে যায়। গীতাঞ্জলি বা সোনার তরী পড়ার সময় পাঠক অনুভব করেন যেন তারা প্রকৃতি ও জীবনের এক গভীর রহস্য উদঘাটন করছেন।

পাঠকের মানসিক অবস্থা:

"আনন্দধারা বহিছে ভুবনে" পড়ার সময় পাঠক নিজের জীবনের আনন্দ ও বেদনার মধ্যেও একটি পরম শান্তি অনুভব করেন।"তোমার সৃষ্টি সুখের উল্লাসে" কবিতাটি পড়ার সময় পাঠক নিজেকে প্রকৃতির সুরের মধ্যে হারিয়ে ফেলেন। এতে আনন্দ, গভীরতা এবং শান্তি মিলে একটি চেতনাময় অভিজ্ঞতা তৈরি হয়।

1. আধ্যাত্মিক উন্মেষ:

গীতাঞ্জলি পড়ে পাঠকের মনে এক ধরনের আধ্যাত্মিক অনুভূতি জাগে। অসীমের প্রতি গভীর টান এবং আত্মার মুক্তির আকাঙ্ক্ষা অনুভূত হয়।

2. প্রেমের অনুরণন:

তাঁর প্রেমের কবিতা পড়লে একধরনের মিষ্টি বেদনা এবং অতীত স্মৃতির জন্য হালকা মনখারাপ হয়।

3. প্রকৃতির প্রতি মুগ্ধতা:

সোনার তরী বা শেষের কবিতা পড়ে পাঠক প্রকৃতির সৌন্দর্যে ডুবে যান। এ যেন জীবনের সরল আনন্দ।

জীবনানন্দ দাশ

জীবনানন্দের কবিতায় বাংলার গ্রামীন প্রকৃতি এবং তার অন্তর্লীন সৌন্দর্য গভীর মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলে।জীবনানন্দের কবিতায় একাকীত্ব, নস্টালজিয়া, এবং সৌন্দর্যের অপার্থিব অনুভূতি পাঠকের মনকে বিমোহিত করে। যেমন: বনলতা সেন পড়ার সময় পাঠক একটি রহস্যময় নায়িকার সঙ্গে দেখা করার অদ্ভুত অনুভূতিতে আবদ্ধ হয়ে যান।

"আবার আসিব ফিরে" লাইনটি পাঠকের মনে এক ধরণের চিরন্তন প্রত্যাবর্তনের আশা জাগায়।"এমন এক রাতে সে আসে," লাইনটি পাঠককে সেই প্রিয় মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করার আবেগে নিয়ে যায়।

পাঠকের মানসিক অবস্থা:

1. প্রকৃতির প্রতি মুগ্ধতা:

বনলতা সেন বা রূপসী বাংলা পড়লে পাঠক যেন প্রকৃতির সৌন্দর্যে ডুবে যান।

2. নির্জনতার অভিজ্ঞতা:

তাঁর কবিতায় একাকীত্বের এমন চিত্র পাওয়া যায় যা পাঠকের মনকে গভীরভাবে নাড়া দেয়।

3. সময় এবং মৃত্যুর উপলব্ধি:

জীবনানন্দের কাব্যে জীবনের অস্থায়ীত্ব এবং মৃত্যুর অবশ্যম্ভাবিতার কথা বারবার উঠে আসে, যা পাঠককে দার্শনিক চিন্তায় নিমজ্জিত করে।

কাজী নজরুল ইসলাম

নজরুলের বিদ্রোহী কবিতায় যে তীব্র আবেগ ও বিদ্রোহের সুর পাওয়া যায়, তা পাঠকের মনে উদ্দীপনার সৃষ্টি করে।

"আমি চির বিদ্রোহী বীর" লাইনটি পাঠকের মধ্যে সাহসিকতা এবং স্বাধীনতার জন্য অদম্য ইচ্ছা জাগিয়ে তোলে।

উপন্যাস: সমাজ, চরিত্র এবং বাস্তবতার অনুরণন

পাঠকের মানসিক অবস্থা:

1. বিদ্রোহের অনুপ্রেরণা:

বিদ্রোহী কবিতা পাঠে এক অদম্য শক্তি অনুভূত হয়। অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস সঞ্চার হয়।

2. সমতার স্বপ্ন:

নজরুলের গানে ও কবিতায় শ্রেণিহীন সমাজের যে আকাঙ্ক্ষা ফুটে ওঠে, তা পাঠকের মনে সাম্য ও ন্যায়বিচারের তীব্র আকাঙ্ক্ষা জাগায়।

3. দুঃখের গভীর উপলব্ধি:

দোলনচাঁপা বা তাঁর অন্যান্য প্রেমের কবিতাগুলো পড়ে পাঠকের মনে একটি শোকানুভূতি কাজ করে।

4. সংগ্রামের সাহস:

তাঁর লেখায় জাতীয়তাবাদ এবং সংগ্রামের চেতনায় পাঠকের মন ভরে ওঠে।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

শরৎচন্দ্রের দেবদাস বা শ্রীকান্ত উপন্যাসে প্রেম, বিচ্ছেদ, এবং মানবজীবনের দ্বন্দ্ব চমৎকারভাবে চিত্রিত হয়েছে।

পাঠকের মানসিক অবস্থা:

দেবদাসের প্রেমের ব্যর্থতা পাঠকের মনে এক ধরণের শূন্যতা এবং একই সঙ্গে সহানুভূতির সৃষ্টি করে।

1. গভীর আবেগের জোয়ার:

দেবদাস বা শ্রীকান্ত পড়ে পাঠকের হৃদয় গভীর আবেগে আপ্লুত হয়। প্রেমের ব্যর্থতা এবং বন্ধুত্বের টানাপোড়েন পাঠককে ভাবায়।

2. নারীর সংগ্রাম অনুভব:

শরৎচন্দ্রের নারীকেন্দ্রিক চরিত্রগুলো পাঠকের মনে সমবেদনা ও শ্রদ্ধার উদ্রেক করে।

3. মানব সম্পর্কের জটিলতা:

তাঁর গল্প পড়লে সম্পর্কের সূক্ষ্ম জটিলতা ও মানবিকতার গভীরতা উপলব্ধি হয়।

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

বঙ্কিমের আনন্দমঠ বা কপালকুণ্ডলা পড়ার সময় পাঠক ব্রিটিশ আমলের সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার গভীরে প্রবেশ করেন।আনন্দমঠ এর মতো উপন্যাস পড়ার সময় পাঠক ব্রিটিশ আমলের রাজনৈতিক আবেগ এবং ধর্মীয় চেতনার মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করেন।

পাঠকের মানসিক অবস্থা:

বন্দেমাতরম গানটি জাতীয়তাবাদী আবেগের সঞ্চার করে।

1. দেশপ্রেমের উত্তেজনা:

আনন্দমঠ বা বন্দেমাতরম পাঠে পাঠকের মনে দেশপ্রেমের এক অদ্ভুত ঝড় উঠে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের চেতনায় ভাসিয়ে নিয়ে যায়।

2. নৈতিক দ্বন্দ্ব:

তাঁর উপন্যাসে সমাজের মূল্যবোধ ও নীতির টানাপোড়েন পাঠকের মনেও একধরনের দ্বিধার সৃষ্টি করে।

3. অতীতের প্রতি আকর্ষণ:

বঙ্কিমচন্দ্রের ঐতিহাসিক উপন্যাসে ভারতীয় অতীতের গৌরবময় সময়ের প্রতি মুগ্ধতা অনুভূত হয়।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

সুনীলের সেই সময় বা প্রথম আলো পড়ার সময় পাঠকের মনে ঐতিহাসিক ঘটনার সঙ্গে নিজেদের জীবনের একটি সংযোগ তৈরি হয়।

পাঠকের মানসিক অবস্থা:

1. যৌবনের উত্তেজনা:

সেই সময় বা প্রথম আলো পড়ে পাঠকের মনে উত্তাল সময়ের চিত্র ফুটে ওঠে।

2. অন্তর্জগতের অন্বেষণ:

তাঁর কবিতা ও গদ্যে মনুষ্যত্বের গভীরতা পাঠকের আত্মপরিচয়ের দিকে নিয়ে যায়।

3. আধুনিক সমাজের প্রতিচ্ছবি:

তাঁর লেখায় আধুনিক জীবনের দ্বন্দ্ব এবং সমস্যার পরিচয় পেয়ে পাঠক গভীরভাবে ভাবতে বাধ্য হন।

দার্শনিক সাহিত্য

রবীন্দ্রনাথের সাধনা ও চিন্তাধারা

রবীন্দ্রনাথের সাধনা বা ধর্ম গ্রন্থগুলো পাঠকের মনকে চেতনার এক উচ্চতর স্তরে নিয়ে যায়।

অভিজ্ঞতা:

আত্মার শান্তি এবং আধ্যাত্মিক সত্য অনুসন্ধানের একটি অনন্য ধারা তৈরি হয়।

ইংরেজি সাহিত্যিকদের প্রভাব: মনের গভীরে যাত্রা

ইংরেজি সাহিত্যের লেখকদের কাজ শুধুমাত্র পাঠককে বিনোদিত করে না, বরং তাদের মনের গভীরতায় পৌঁছে যায়। উইলিয়াম শেকসপিয়ার, জেন অস্টেন, চার্লস ডিকেন্স, ভার্জিনিয়া উলফ, জর্জ অরওয়েল, জন কিটস, উইলিয়াম ওয়ার্ডসওর্থ এবং লিও টলস্টয়ি সহ অনেক মহান সাহিত্যিক তাদের লেখা দিয়ে মানুষের আত্মসাক্ষাৎ এবং আধ্যাত্মিক পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। তাদের লেখাগুলি শুধু মনোরঞ্জন নয়, পাঠকদের মানসিকতাকে শেপ করে, তাদের ভাবনা এবং অনুভূতিকে গভীর করে তোলে।

কবিতা: শব্দের সুরম্য সিম্ফনি

জন কীটস

কীটসের Ode to a Nightingale বা To Autumn এর মতো কবিতা পড়ার সময় পাঠকের মনে প্রকৃতির প্রতি এক গভীর ভালোবাসা জাগে।

পাঠকের মানসিক অবস্থা:

"Thou wast not born for death, immortal Bird!" লাইনটি পাঠককে জীবনের ক্ষণস্থায়ী সৌন্দর্য এবং শাশ্বততার ভাবনায় নিমগ্ন করে।

1. সৌন্দর্যের সন্ধান:

কিটসের কবিতা, যেমন Ode to a Nightingale  এবং  Ode on a Grecian Urn পাঠকের মনে সৌন্দর্য, প্রেম এবং জীবনের অস্থায়ীত্ব নিয়ে গভীর অনুভূতি সৃষ্টি করে।

2. রোমান্টিক আবেগ:

কিটসের লেখা পাঠে পাঠক এক ধরনের আত্মবিশ্বাসী প্রেমের অনুভূতি পায়, যা মানব জীবনের পূর্ণতা এবং সুখের প্রতীক।

3. পৃথিবী ও আত্মার মধ্যে এক যোগসূত্র:

কিটসের কবিতা প্রকৃতির মাঝে মানুষের আত্মাকে খুঁজে বের করার এক ধরনের নির্জন আনন্দ প্রদান করে।

উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ

ওয়ার্ডসওয়ার্থের Lines Written a Few Miles Above Tintern Abbey কবিতাটি প্রকৃতির সঙ্গে মানবজীবনের গভীর সংযোগ চিত্রিত করে।

পাঠকের মানসিক অবস্থা:

প্রকৃতির সৌন্দর্য পাঠকের মনে এক ধরনের আত্মিক আনন্দের সৃষ্টি করে।

1. প্রকৃতির সঙ্গে মেলবন্ধন:

আই উইশ দ্য ডে ভাদ এ ডেইল এবং তুবা হস দ্য মুন এর মতো কবিতাগুলি প্রকৃতি এবং অন্তর্জগতের সম্পর্ক নিয়ে ভাবনায় নিমজ্জিত করে।

2. আত্মবিশ্বাস এবং শান্তি:

তার কবিতার মধ্যে যে শান্তির অভিজ্ঞান এবং প্রকৃতির সৌন্দর্যের মধ্যে মানব আত্মার শান্তি প্রতিফলিত হয়, তা পাঠককে এক শান্তির আবেশে আচ্ছন্ন করে।

3. প্রকৃতির অন্তর্দৃষ্টি:

ওয়ার্ডসওর্থের লেখা পাঠে পাঠক প্রকৃতির সঙ্গে এক গভীর সম্পর্ক অনুভব করেন, যা তার মনকে প্রশান্ত করে।

উপন্যাস: চরিত্র এবং আবেগের গভীরতা

উইলিয়াম শেকসপিয়ার :

পাঠকের মানসিক অবস্থা:

1. আবেগের টানাপোড়েন এবং মুক্তি:

হ্যামলেট এবং ম্যাকবেথ পড়লে পাঠকের মনে এক ধরনের ভয় এবং মুগ্ধতার মিশ্র অনুভূতি তৈরি হয়। মানুষ তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা, অপরাধবোধ, এবং জীবনের অর্থ নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে।

হ্যামলেট-এর বিখ্যাত সংলাপ "To be or not to be" পাঠকের মনে জীবন ও মৃত্যুর গভীর অর্থ নিয়ে চিন্তার খোরাক দেয়।

2. রোমান্টিক উচ্ছ্বাস:

রোমিও এবং জুলিয়েট পড়ে পাঠক প্রেমের গভীরতায় মুগ্ধ হয়ে যান। তাদের ট্র্যাজিক প্রেমের কাহিনি হৃদয়ে একধরনের মধুর বিষাদের সৃষ্টি করে।

অ্যা মিডসামার নাইটস ড্রিম পাঠে পাঠকের মনে একধরনের কল্পনাপ্রবণ আনন্দ তৈরি হয়।

3. দার্শনিক চিন্তায় নিমজ্জন:

দ্য টেম্পেস্ট বা কিং লিয়ার পড়ে পাঠক ক্ষমতা, ক্ষমার গুরুত্ব, এবং মানবিকতার গভীরতা নিয়ে চিন্তায় মগ্ন হন।

জেন অস্টেন

প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস উপন্যাসে এলিজাবেথ এবং ডার্সির সম্পর্ক পাঠকের মনে জটিল সামাজিক সম্পর্কের সূক্ষ্ম দিকগুলো নিয়ে গভীর চিন্তার সৃষ্টি করে।

পাঠকের মানসিক অবস্থা:

1. রোমান্টিক ও সামাজিক সম্পর্ক:

প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস বা সেন্স অ্যান্ড সেন্সিবিলিটি পড়লে পাঠক প্রেম এবং ব্যক্তিত্বের খুঁটিনাটি অনুভব করে। সমাজের নানা রীতি এবং শ্রেণিবৈষম্য নিয়ে পাঠক চিন্তায় মগ্ন হয়।

2. ব্যঙ্গাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি:

অস্টেনের লেখা সমাজের ভণ্ডামি, শ্রেণিবিভাগের বিরুদ্ধে একটি সূক্ষ্ম সমালোচনা করে, যা পাঠককে গভীরভাবে ভাবায়।

চার্লস ডিকেন্স

ডিকেন্সের Great Expectations এবং Oliver Twist সামাজিক অবিচার এবং দারিদ্র্যের চিত্র তুলে ধরে।

পাঠকের মানসিক অবস্থা:

পাঠক মানবতার প্রতি সহানুভূতিশীল হন এবং পরিবর্তনের জন্য আগ্রহী হন।

দার্শনিক ও ঐতিহাসিক সাহিত্য

লিও টলস্টয়

টলস্টয়ের Anna Karenina এবং War and Peace মানব সম্পর্ক, নৈতিক দ্বন্দ্ব, এবং যুদ্ধের প্রভাব নিয়ে গভীর দার্শনিক প্রশ্ন উত্থাপন করে।

পাঠকের মানসিক অবস্থা:

জীবন এবং মৃত্যুর অর্থ নিয়ে পাঠকের গভীর মনস্তাত্ত্বিক চিন্তা তৈরি হয়।

1. মানবিক দুঃখ-দুর্দশা:

ওয়ার অ্যান্ড পিস বা আন্না কারেনিনা পড়ে পাঠক মানুষের দুঃখ, সংগ্রাম এবং সম্পর্কের জটিলতা বুঝতে পারে।

2. আধ্যাত্মিক যাত্রা:

টলস্টয়ের লেখার মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় মানব জীবন এবং ধর্মীয় দর্শনের সম্পর্ক, যা পাঠকের মধ্যে আত্মসমালোচনার প্রবণতা সৃষ্টি করে।

3. ঐতিহাসিক এবং সামাজিক বাস্তবতা:

তার উপন্যাসের মাধ্যমে পাঠক রাশিয়ান সমাজের বদল, যুদ্ধের প্রভাব এবং জীবনের অস্থায়ীতা সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করতে শুরু করেন।

জর্জ অরওয়েল

1984 এবং Animal Farm এর মতো গ্রন্থগুলো রাজনৈতিক মতাদর্শ এবং মানবতার ভবিষ্যৎ নিয়ে পাঠকের মনে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করে।

পাঠকদের বিভিন্ন মানসিক অবস্থা:

কাব্যপ্রেমী পাঠক

কবিতার লিরিক্যাল মাধুর্য এবং শব্দচয়ন পাঠকের মনে এক ধরনের ভাবুকতা এবং শান্তি জাগিয়ে তোলে।

উদাহরণ: জীবনানন্দের রূপসী বাংলা, কীটসের Ode to a Nightingale।

উপন্যাসপ্রেমী পাঠক

গল্পের চরিত্র ও কাহিনির বাঁক পাঠকের বাস্তব জীবনের সঙ্গে একটি সূক্ষ্ম সংযোগ তৈরি করে।

উদাহরণ: শরৎচন্দ্রের দেবদাস, জেন অস্টেনের Pride and Prejudice

দার্শনিক ও চিন্তাশীল পাঠক

দার্শনিক সাহিত্যের গভীরতা পাঠকের চিন্তাশক্তি ও মানসিক দক্ষতাকে প্রসারিত করে।

উদাহরণ: রবীন্দ্রনাথের সাধনা, টলস্টয়ের War and Peace।

উপসংহার

বাংলা এবং ইংরেজি সাহিত্যের মধ্যে নিমগ্ন হওয়ার এই অভিজ্ঞতা পাঠকদের জন্য মানসিক শান্তি, আনন্দ এবং কল্পনার এক অদ্বিতীয় জগৎ সৃষ্টি করে। বই পড়া শুধুমাত্র একটি বিনোদনের মাধ্যম নয়, এটি আত্মার পরিশুদ্ধি এবং চিন্তার বিকাশের একটি যাত্রা। ফ্লো স্টেট হল সেই অবস্থা যেখানে পাঠক সাহিত্যকর্মের সঙ্গে পুরোপুরি একাত্ম হয়ে যান এবং সেই অভিজ্ঞতা জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে।

Saturday, November 23, 2024

Sati Cremation: A Pyre of Oppression and Reform

সতীদাহ প্রথা: ইতিহাসের নির্মম অধ্যায় এবং এর বিলোপের সংগ্রাম

প্রাককথন:

ভারতীয় ইতিহাসে বহু নির্মম প্রথা প্রচলিত ছিল, যা নারীদের জীবনের প্রতি সামাজিক বৈষম্য ও নিষ্ঠুরতার চরম উদাহরণ। এর মধ্যে সবচেয়ে নৃশংস ও আলোচিত প্রথাগুলির একটি হল সতীদাহ প্রথা। এই প্রথার মাধ্যমে একজন বিধবাকে তার মৃত স্বামীর চিতায় জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হত। যদিও এটি একসময় সমাজের একটি অংশ হিসেবে গ্রহণযোগ্য ছিল, তবে এর পেছনে ছিল সামাজিক, ধর্মীয়, এবং পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার এক গভীর চক্রান্ত।

সতীদাহ প্রথার উৎপত্তি এবং প্রসার:

সতীদাহ প্রথার সঠিক উৎপত্তি সম্পর্কে ঐতিহাসিক তথ্য বিভ্রান্তিকর হলেও, কয়েকটি ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় সূত্র এই প্রথার শেকড় অনুসন্ধান করতে সাহায্য করে।

বৈদিক যুগে সূচনা:

প্রাচীন ভারতীয় ধর্মগ্রন্থ ঋগ্বেদ-এ সতীদাহের প্রত্যক্ষ উল্লেখ নেই। বরং সেখানে একজন বিধবাকে নতুন জীবন শুরুর ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে:

“উত্তিষ্ঠ নারি, স্বগ্রহং গচ্ছ, জীবিতাহ ভব।”

অর্থাৎ, “ওহে নারী, ওঠো এবং নতুন জীবন শুরু করো।”

পরবর্তীতে মনুসংহিতা এবং যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতি-তে বিধবাদের কঠোর জীবনযাপনের নিয়ম প্রচলিত হয়, যা সতীদাহ প্রথার ধারণাকে শক্তিশালী করে।

মধ্যযুগীয় সমাজে প্রসার:

মধ্যযুগে রাজপুত সমাজে সতীদাহ প্রথা প্রচলিত ছিল, বিশেষত যুদ্ধকালীন সময়ে।

উদাহরণ: ১৫৬৭ সালে চিতোরের রাজা উদয় সিংয়ের মৃত্যুর পর রাজপুত রানীরা ‘জহর ব্রত’ পালন করেন, যা ছিল সম্মিলিত আত্মাহুতির এক নির্মম উদাহরণ।

অনেক সময় এই প্রথা বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়ায়। কোনও বিধবা যদি সতীদাহে অস্বীকৃতি জানাতেন, তবে তাকে সমাজচ্যুত করা হত বা এমনকি প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হত।

মুঘল যুগ এবং ব্রিটিশ শাসনকাল:

মুঘল আমলে সম্রাট আকবর সতীদাহ প্রথার বিরোধিতা করেন এবং তাঁর রাজ্যে বিধবাদের পুনর্বিবাহের অনুমতি দেন।

ব্রিটিশ পর্যটক এবং মিশনারিদের চোখে এই প্রথা ছিল এক নির্মম বর্বরতা। ১৮২০-এর দশকে উইলিয়াম কেরি ও হেনরি মার্টিন-এর মতো মিশনারিরা এই প্রথার বিরুদ্ধে সরব হন।

সতীদাহ প্রথার নির্মম উদাহরণ

বাঙলার সতীদাহ প্রথা:

বাঙলায় সতীদাহ প্রথা ছিল অত্যন্ত প্রচলিত। বিভিন্ন বর্ণ ও সম্প্রদায়ে এই প্রথার অস্তিত্ব পাওয়া যায়।

1. কোল্লুর গ্রামের ঘটনা:

১৮১৫ সালে কোল্লুর গ্রামে এক বিধবাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে চিতায় বসানো হয়। আগুন ধরানোর আগে তিনি পালানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু গ্রামের মানুষ তাঁকে জোর করে চিতায় ফিরিয়ে আনেন।

2. ক্যালকাটা গেজেটের বিবরণ:

১৮১৮ সালে ক্যালকাটা গেজেট-এ একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়, যেখানে একজন ১৭ বছরের বিধবা তার ৪০ বছরের স্বামীর চিতায় জোর করে বসতে বাধ্য হন। তাঁর চিৎকার ও কান্না গ্রামবাসীদের বিবেককে স্পর্শ করতে পারেনি।

3. রাজা রামমোহন রায়ের সাক্ষ্য:

রাজা রামমোহন রায় নিজে একটি ঘটনার সাক্ষী ছিলেন, যেখানে এক বৃদ্ধ বিধবাকে তার চিতার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। এই নির্মম ঘটনা তাঁর মনে গভীর প্রভাব ফেলে এবং তাঁকে সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করে।

সতীদাহ প্রথার নির্মমতা:

সতীদাহ প্রথার প্রকৃতি ছিল অত্যন্ত হিংস্র এবং নারীবিদ্বেষমূলক।

1. স্বেচ্ছায় না, বাধ্যতামূলক:

অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারীদের এই প্রথা মেনে নিতে বাধ্য করা হতো।

কোনও মহিলা যদি এই প্রথার বিরোধিতা করত, তবে তাকে সমাজচ্যুত করা হত বা শক্তি প্রয়োগ করে চিতায় বসিয়ে দেওয়া হত।

2. প্রতিহিংসা এবং শাস্তি:

সমাজের উচ্চবর্ণের নারীদের ক্ষেত্রে সতীদাহ প্রথা ছিল তাদের ‘পবিত্রতা’ প্রমাণের উপায়।

নারীদের শরীরে আগুনের শিখার সাথে তাদের জীবনের সমস্ত স্বপ্ন, আশা এবং ভবিষ্যৎ পুড়ে যেত।

3. পরিবার এবং সমাজের ভূমিকা:

নারীদের সতীদাহ করতে প্রায়ই তাদের পরিবার এবং সমাজের প্রবল চাপ থাকত।

বলা হত, এভাবে আত্মত্যাগ করলে স্বামী এবং পরিবারের আত্মার শান্তি মিলবে।

সতীদাহ প্রথা বন্ধের আন্দোলন:রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা

১. বিবেকের কণ্ঠস্বর:

রাজা রামমোহন রায় সতীদাহ প্রথাকে মানবতার বিরুদ্ধে একটি অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি যুক্তি দেন, এটি নারীর মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতার সম্পূর্ণ লঙ্ঘন।

২. ধর্মীয় যুক্তি:

তিনি বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ ঘেঁটে প্রমাণ করেন যে হিন্দু ধর্ম সতীদাহকে সমর্থন করে না।

ঋগ্বেদ এবং উপনিষদ-এর উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি দেখান যে বিধবার জন্য নতুন জীবনের পথ সুগম করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

৩. জনমত গঠন:

তিনি ইংরেজি ও বাংলায় বিভিন্ন প্রবন্ধ লিখে সমাজকে সতীদাহের অমানবিক দিকটি বোঝান।

তাঁর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্ম সমাজ সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে সরব হয়।

লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের ভূমিকা:

রাজা রামমোহন রায়ের সহায়তায় লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক সতীদাহ প্রথা বিলোপের জন্য আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেন।

১৮২৯ সালে Regulation XVII আইন পাস হয়, যা সতীদাহ প্রথাকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে।

অন্যান্য আন্দোলন:

রাজা রামমোহন রায়ের পরে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিধবাদের পুনর্বিবাহের পক্ষে সোচ্চার হন।

১৮৫৬ সালে বিধবাবিবাহ আইন পাস হয়, যা সতীদাহের পরবর্তী সামাজিক সমস্যাগুলিকে লাঘব করে।

ব্রিটিশ এবং অন্যান্য ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তি:ভারতে অ-ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তি

সম্পাদনা:

১৫১০ সালে পর্তুগিজদের গোয়া জয়ের পরপরই আফোন্সো দে আলবুকার্ক সতীপ্রথা নিষিদ্ধ করেন।স্থানীয় খ্রিস্টান এবং চার্চ কর্তৃপক্ষের প্রতিবাদ সত্ত্বেও স্থানীয় ব্রাহ্মণরা সদ্য আগত  ফ্রান্সিসকো ব্যারেটোকে ১৫৫৫ সালে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেছিলো, কিন্তু নিষেধাজ্ঞা ১৫৬০ সালে কনস্ট্যান্টিনো দে ব্রাগান্সা এর দ্বারা পুনঃস্থাপন করা হয় যারা অনুশীলনকে উৎসাহিত করে তাদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত গুরুতর ফৌজদারি শাস্তি (সম্পত্তি ও স্বাধীনতার ক্ষতি সহ) দিয়ে।

ওলন্দাজ এবং ফরাসিরা তাদের নিজ নিজ উপনিবেশ চুঁচুড়া এবং পুদুচেরিতে এটি নিষিদ্ধ করেছিল।দিনেমাররা, যারা থারাঙ্গাবার, এবং শ্রীরামপুরের ছোট অঞ্চলগুলি দখল করেছিল, ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত এটির অনুমতি দিয়েছিল। থারাঙ্গাবারে, দিনেমার উপনিবেশের সময়কালে (১৬২০-১৮৪৫), দিনেমাররা কঠোরভাবে সতীদাহ প্রথাকে নিষেধ করেছিল।

প্রারম্ভিক ব্রিটিশ নীতি:

১৬৮০ সালে সতীদাহের ব্যাপারে প্রথম আনুষ্ঠানিক ব্রিটিশ প্রতিক্রিয়া ছিল যখন মাদ্রাজের প্রতিনিধি  স্ট্রেনশাম মাস্টার হস্তক্ষেপ করেন এবং মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে হিন্দু বিধবাকে জ্বালিয়ে দেওয়া নিষিদ্ধ করেন। অনুশীলনটি সীমিত বা নিষিদ্ধ করার প্রচেষ্টা পৃথক ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের দ্বারা করা হয়েছিল, কিন্তু ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সমর্থন ছাড়াই। কারণ এটি হিন্দু ধর্মীয় বিষয়ে অ-হস্তক্ষেপের নীতি অনুসরণ করে এবং সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে কোনো আইন বা নিষেধাজ্ঞা ছিল না।প্রথম আনুষ্ঠানিক ব্রিটিশ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল ১৭৯৮ সালে, শুধুমাত্র কলকাতা শহরে। অনুশীলনটি আশেপাশের অঞ্চলে অব্যাহত ছিল। ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে, ব্রিটেনের ধর্মপ্রচারক চার্চ এবং ভারতে এর সদস্যরা সতীদাহের বিরুদ্ধে প্রচারণা শুরু করে। এই সক্রিয়তা এমন সময়ের মধ্যে এসেছিল যখন ভারতে ব্রিটিশ ধর্মপ্রচারকরা সমগ্রভাবে ধর্মপ্রচারকমূলক উদ্যোগে তাদের স্বতন্ত্র অবদান হিসাবে খ্রিস্টান শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচার ও প্রতিষ্ঠার দিকে মনোনিবেশ করা শুরু করেছিল।এই প্রচারাভিযানের নেতারা হলেন উইলিয়াম কেরি এবং উইলিয়াম উইলবারফোর্স। এই আন্দোলনগুলি এই আইনটি নিষিদ্ধ করার জন্য কোম্পানির উপর চাপ সৃষ্টি করে। উইলিয়াম কেরি এবং শ্রীরামপুরের অন্যান্য ধর্মপ্রচারক ১৮০৩-১৮০৪ সালে কলকাতার ৩০-মাইল ব্যাসার্ধের মধ্যে অঞ্চলের জন্য সতীদাহের ঘটনাগুলির উপর আদমশুমারি পরিচালনা করেন, সেখানে ৩০০ টিরও বেশি ঘটনা খুঁজে পান।ধর্মপ্রচারকরাও হিন্দু ধর্মতাত্ত্বিকদের কাছে গিয়েছিলেন, যারা অভিমত দিয়েছিলেন যে হিন্দু ধর্মগ্রন্থ দ্বারা নির্দেশিত না হয়ে অনুশীলনকে উৎসাহিত করা হয়েছে।

শ্রীরামপুর ব্রিটিশদের পরিবর্তে দিনেমার উপনিবেশের অধীনে ছিল, এবং যে কারণে কেরি ব্রিটিশ অঞ্চলের পরিবর্তে দিনেমার ভারতে তার ধর্মপ্রচার শুরু করেন, কারণ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের শাসনক্ষেত্রের মধ্যে খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারক কার্যকলাপ গ্রহণ করেনি। ১৮১৩ সালে, যখন কোম্পানির সনদ পুনর্নবীকরণের জন্য আসে উইলিয়াম উইলবারফোর্স, কেরি এবং অন্যান্য শ্রীরামপুর ধর্মপ্রচারকদের দ্বারা সংগৃহীত সতীদাহ সংক্রান্ত পরিসংখ্যান এবং সুত্তির বিরুদ্ধে জনমতকে একত্রিত করার জন্য, ভারতে ধর্মপ্রচারক কার্যক্রমকে বৈধতা দেওয়ার জন্য সংসদে বিল সফলভাবে পাস করা নিশ্চিত করা হয়েছে, ভারতীয় সমাজের ধর্মীয় পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রথার অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে। তিনি হাউস অফ কমন্স এ তার ভাষণে বলেছেন:

Let us endeavour to strike our roots into the soil by the gradual introduction and establishment of our own principles and opinions; of our laws, institutions and manners; above all, as the source of every other improvement, of our religion and consequently of our morals.

এলিজা হুল তার পুস্তক "Personal Narrative of a Mission to the South of India, from 1820 to 1828"-এ ব্যাঙ্গালোরে সতীদাহের উদাহরণ দিয়েছেন, যা তিনি ব্যক্তিগতভাবে দেখেননি। অন্য ধর্মপ্রচারক, মিস্টার ইংল্যান্ড, ৯ জুন ১৮২৬-এ ব্যাঙ্গালোর বেসামরিক ও সামরিক নিবাসে সতীদাহ প্রত্যক্ষ করার কথা জানিয়েছেন। যাইহোক, মাদ্রাজ সরকার ১৮০০-এর দশকের গোড়ার দিকে  অনুশীলন বন্ধ করার পর এই অনুশীলনগুলি খুবই বিরল ছিল।

১৮১৫ সালে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির মধ্যে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ পদ্ধতিগতভাবে অনুশীলনের তথ্য সংগ্রহ শুরু করে।

নিষেধাজ্ঞার পরে, সিন্ধু অঞ্চলের বালুচ যাজকরা  ব্রিটিশ গভর্নর চার্লস নেপিয়ারের কাছে অভিযোগ করেছিলেন যে তারা তাদের জাতির পবিত্র রীতিতে হস্তক্ষেপ বলে দাবি করেছিল। নেপিয়ার উত্তর দিলেন:

Be it so. This burning of widows is your custom; prepare the funeral pile. But my nation has also a custom. When men burn women alive we hang them, and confiscate all their property. My carpenters shall therefore erect gibbets on which to hang all concerned when the widow is consumed. Let us all act according to national customs!









সতীদাহ প্রথার বিলোপের প্রভাব

1. নারীর অধিকারের সূচনা:

সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ হওয়ার পর ভারতীয় সমাজে নারীর অবস্থান ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়।

2. শিক্ষার প্রসার:

নারীরা শিক্ষার প্রতি আকৃষ্ট হতে শুরু করেন।

বিদ্যাসাগরের মতো সমাজ সংস্কারকের প্রচেষ্টায় নারীশিক্ষার প্রচলন হয়।

3. সমাজে মানবিকতার পুনরুজ্জীবন:

সতীদাহ প্রথার বিলোপ একটি মানবিক সমাজ গঠনের পথে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়।

উপসংহার:

সতীদাহ প্রথা ভারতীয় সমাজের এক অন্ধকার অধ্যায়। এটি কেবল একটি নারীর জীবন ধ্বংস করত না, বরং সমাজের মানবিকতার উপর এক গভীর আঘাত হানত। রাজা রামমোহন রায় এবং লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের মতো মানুষদের নিরলস প্রচেষ্টার ফলে এই প্রথা বিলুপ্ত হয়। কিন্তু এর ইতিহাস আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে সমাজে পরিবর্তন আনতে সাহসিকতা এবং প্রতিজ্ঞার প্রয়োজন।



Sunday, November 17, 2024

Bengali Art and Craft: The Heritage of Terracotta, Kantha Stitch, and Kalighat Paintings

বাংলার শিল্প ও কারুশিল্প: ঐতিহ্যের এক অনন্ত প্রবাহ

বাংলার শিল্প ও কারুশিল্প তার বহুমুখী সৌন্দর্য, ঐতিহ্য, এবং বাঙালির সৃষ্টিশীলতার নিখুঁত বহিঃপ্রকাশ। বাংলার মাটি, মানুষের আবেগ, ও দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে টেরাকোটা শিল্প, কাঁথা সেলাই, এবং কালীঘাট চিত্রকলার মতো অনন্য শৈল্পিক সৃষ্টি।

টেরাকোটা শিল্প: পোড়ামাটির অমর ইতিহাস

টেরাকোটা একটি লাতিন শব্দ: 'টেরা' অর্থ মাটি, আর 'কোটা' অর্থ পোড়ানো। মানুষের ব্যবহার্য পোড়ামাটির তৈরি সকল রকমের দ্রব্য টেরাকোটা নামে পরিচিত। আঠালো মাটির সঙ্গে খড়কুটো, তুষ প্রভৃতি মিশিয়ে কাদামাটি প্রস্তুত করা হয়। সেই মাটি থেকে মূর্তি, দৃশ্যাবলি তৈরি করে রোদে শুকিয়ে আগুনে পুড়িয়ে টেরাকোটা ভাস্কর্য তৈরি করা হয়। মানবসভ্যতার বিকাশকাল হতে পোড়ামাটির ভাস্কর্যের ব্যবহার পরিলক্ষিত হচ্ছে। সুমেরীয় সভ্যতা, ব্যাবীলনীয় সভ্যতা, মায়া সভ্যতায় এই শিল্পের প্রচলন ছিল। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে মৌর্য সাম্রাজ্য, গুপ্ত সাম্রাজ্য-এর বহু টেরাকোটার নিদর্শন পাওয়া গেছে। পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর শহর টেরাকোটা শিল্পের জন্য বিখ্যাত।

পাল যুগ (৮ম-১২শ শতাব্দী): এই সময় বৌদ্ধ মঠ এবং বিহারে টেরাকোটার প্রচলন দেখা যায়।পাল আমলে নির্মিত মন্দিরগুলি একটি স্বতন্ত্র বঙ্গ শৈলীকে চিত্রিত করেছে।বর্ধমান জেলার বরাকরের সিদ্ধেশ্বর মহাদেব মন্দির আদি পাল শৈলীর এমনই একটি চমৎকার উদাহরণ।টেরাকোটা ভাস্কর্য আলংকারিক উদ্দেশ্যে খুব জনপ্রিয় ছিল। চিত্রকলায়, দেয়ালচিত্রের জন্য ম্যুরাল অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল।ক্ষুদ্রাকৃতির চিত্রকর্মগুলিও এই সময়কালে যথেষ্ট উন্নতি দেখায়।

মল্লরাজ যুগ (১৬শ-১৮শ শতাব্দী): বিষ্ণুপুরের মন্দিরগুলিতে টেরাকোটার সর্বোচ্চ শৈল্পিক উৎকর্ষতা অর্জিত হয়।

মুঘল আমলের স্থাপত্য:  মুসলমান শাসন বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতকে। এই সময়ে বাংলায় কাঠামো নির্মাণের মূল গঠনভঙ্গি ছিল ইসলামি রীতি অনুসারে। আর বাইরের কারুকার্য ও কাঁচামাল ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলার লৌকিকরীতির ছাপ দেখা যায়।

ইমারতে ইটের ব্যবহার বাংলার স্থাপত্যরীতির একটি বৈশিষ্ট্য। বাড়ি এবং বেশির ভাগ মন্দির ঢালু ধাঁচে তৈরি করা হতো। এর পিছনে যুক্তি ছিল বেশি বৃষ্টিতে জল দাঁড়াতে পারবে না। এই বিশেষ নির্মাণ পদ্ধতির নাম বাংলা। অঞ্চলের নামেই স্থাপত্যরীতির নাম হওয়ার এটা একটা উদাহরণ। পুরোনো অনেক মন্দিরের কাঠামো এই ধাঁচেই তৈরি হতো। এমনই দুটি কাঠামো পাশাপাশি জুড়ে দিলে তাকে জোড়-বাংলা বলা হতো।চাল বা চালাভিত্তিক মন্দির বানানোর রীতিও বাংলায় দেখা যায়। মন্দিরের মাথায় ক-টি চালা আছে, সে হিসাবেই কোনও মন্দির একচালা, কখনো দো-চালা, কখনো বা আট-চালা হতো। ইসলামীয় স্থাপত্যের ধাঁচে চালা গুলির মাথায়ও মাঝে মধ্যেই খিলান, গম্বুজ বানানো হতো। সাধারণ আয়তক্ষেত্রাকার কাঠামোর উপর একাধিক চূড়া দিয়ে তৈরি মন্দিরও এই সময় বাংলায় বানানো হয়। সেই গুলির নাম রত্ন। একটি চূড়া থাকলে সেটি একরত্ন মন্দির, পাঁচটি চূড়া থাকলে পঞ্চরত্ব মন্দির। এই মন্দিরগুলির বেশির ভাগের দেয়ালে পোড়ামাটির বা টেরাকোটার কাজ করা হতো। পোড়ামাটির তৈরি এই মন্দিরগুলি বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর ছাড়াও বাংলার নানা অঞ্চলে ছড়িয়ে আছে।

এই যুগের বাংলার স্থাপত্য শিল্পের ইতিহাসকে তিনটি মূল পর্যায়ে ভাগ করা যায়। প্রথম পর্যায়ে (১২০১-১৩৩৯ খ্রিঃ) বাংলার রাজধানী ছিল গৌড়। ত্রিবেণীতে জাফর খানের সমাধির ভগ্নাবশেষ, এবং বসিরহাট-এ ছড়িয়ে থাকা কিছু স্তূপ ছাড়া এসময়কার কোনও স্থাপত্যই আজ আর নেই।

দ্বিতীয় পর্যায়ের (১৩৩৯-১৪৪২ খ্রিঃ) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য হলো মালদহের পান্ডুয়ায় সিকান্দর শাহের বানানো আদিনা মসজিদ। এ ছাড়া, হুগলি জেলায় ছোটো-পান্ডুয়ার মিনার ও মসজিদ এবং গৌড়ের শেখ আকি সিরাজের সমাধি এই পর্যায়ের আরও কিছু উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য। তৃতীয় পর্যায়ে (১৪৪২-১৫৩৯ খ্রিঃ) বাংলায় ইন্দো-ইসলামি রীতির স্থাপত্য শিল্প সবচেয়ে উন্নত হয়। পাণ্ডুয়ায় সুলতান জালালউদ্দিন মহম্মদ শাহর (যদু) সমাধি (একলাখি সমাধি নামে বিখ্যাত) এই ধাঁসের সেরা নিদর্শন। উচ্চতায় খুব বেশি না হলেও, টেরাকোটার গম্বুজ ও তার অর্ধগোল আকৃতির জন্য এটি বাংলায় ইন্দো-ইসলামি স্থাপত্যের উন্নতির অন্যতম নজির। বরবক শাহের আমলে তৈরি গৌড়ের দাখিল দরওয়াজা এসময়ের আরও একটি উল্লেখযোগ্য নির্মাণ। এছাড়াও সে সময়ের রাজধানী গৌড়ের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্যের নজির হলো তাঁতিপাড়া মসজিদ, গুম্মাত মসজিদ ও লোটান মসজিদ। ১৪৮৮ খ্রিস্টাব্দে তৈরি হ্যয় ২৬ মিটার উচ্চতার ফিরোজ মিনার। ইট ও টেরাকোটার কাজ ছাড়া, এই মিনারটি সাদা ও নীল রং-এর চকচকে টালি দিয়েও অলংকৃত। ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে তৈরি বড়ো সোনা মসজিদ গৌড়ের সবচেয়ে বড়ো মসজিদ।

              


উল্লেখযোগ্য উদাহরণ:

1. বিষ্ণুপুর মন্দিরসমূহ (বাঁকুড়া):

রাসমঞ্চ মন্দির এবং মদনমোহন মন্দিরের দেয়ালে টেরাকোটা ফলকে মহাকাব্যের কাহিনি, গ্রামীণ জীবন, এবং দেবদেবীর চিত্রাঙ্কন, এনক্র্যাটনো(মল্ল রাজবংশের রাজা দুর্জন সিংহ ১৬৯৪ সালে এই মাস্টারপিসটি তৈরি করেছিলেন। এই এনক্র্যাটনো মন্দিরে মদনা-মোহনা পূজা করা হয়। এ কারণে এটি মদনা-মোহনার মন্দির নামেও পরিচিত। এই  মন্দিরের উচ্চতা ৩৫ ফুট। মন্দিরের কাঠামোটি একটি বিশাল চূড়ার উপর অবস্থিত যা ল্যাটেরাইট মাটি দ্বারা গঠিত।)

বিশেষত্ব: খোদাই করা ফলকগুলোতে সূক্ষ্ম শিল্পকর্ম।

        



2. কৃষ্ণনগরের টেরাকোটা মূর্তি (নদিয়া):

মাটির পুতুল তৈরির এই কারুকাজটি ২০০- ২৫০ বছর পুরানো এবং এটি মূলত পশ্চিমবঙ্গের ঘূর্ণি জেলার কৃষ্ণনগর নামক একটি স্থানে অনুশীলন করা হয় । পুতুল নির্মাতাদের মতে, এই কারুকাজটি যে এলাকায় অবস্থিত এবং চর্চা করা হয় সেটি মূলত ঘূর্ণিতে, যেহেতু সঠিক চিত্র নির্মাতারা এখানে বসতি স্থাপন করেছেন। পুতুল তৈরির ঐতিহ্যবাহী ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ ও পুনরুজ্জীবিত করাই এই প্রচেষ্টার উদ্দেশ্য ।মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র (1710-1783), শিল্পের পৃষ্ঠপোষক, মাটির পুতুল তৈরিতে সমর্থন করেছিলেন। বাংলায় প্রথমবারের মতো কালীপূজা, জগদ্ধাত্রী পূজা শুরু করা একজন অগ্রগামী হিসেবে , তিনি স্থানীয় কারিগরদের উৎসাহিত করেন এবং বাংলার ঢাকা ও নাটোর জেলা থেকে আরও কুমোরদের নিয়ে আসেন কৃষ্ণনগরের পার্শ্ববর্তী ঘূর্ণিতে। তাই, মাটির প্রতিমা তৈরির বাঙালি ঐতিহ্যের সূচনা হয়, যা প্রকৃতপক্ষে আজও সংস্কৃতির একটি পালিত বৈশিষ্ট্য। কৃষ্ণনগরের পুতুল তৈরির কারুশিল্প অনুশীলনকারী কারিগররা ' কুম্ভকারস' নামক সম্প্রদায়ের অন্তর্গত যারা কুমার এবং মাটির মডেল তৈরি করে। কৃষ্ণনগরে নারী ও শিশুসহ তিন শতাধিক মানুষ এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত। শুরুতে চার-পাঁচটি পরিবার নিয়ে শুরু হয়েছিল, এখন এটি একটি বড় সম্প্রদায়। একটি সম্প্রদায় হিসাবে, তারা খুব একীভূত হয় না. সামন্ততান্ত্রিক জমিদারি সংস্কৃতির অবক্ষয় এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকতা হারানো এই শিল্পের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।

নকশা:

কৃষ্ণনগরের মাটির পুতুলগুলো সাধারণত কর্মক্ষেত্রে সাধারণ বাঙালি নারী-পুরুষকে বন্দী করে। এই পুতুলগুলি কারিগরের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বিভিন্ন আবেগ এবং বস্তুর বাস্তবসম্মত উপস্থাপনা প্রদর্শন করে। যে কেউ এই পুতুলগুলি দেখে সহজেই দৃশ্যকল্পটি ব্যাখ্যা করতে পারে এবং অনুভব করতে পারে যে কারিগর চিত্রিত করতে চায়। উদাহরণ হিসেবে, আপনি দেখতে পারেন ঝুড়ি তাঁতিরা বাঁশের ছাল দিয়ে কাজ করছে; একজন ব্রাহ্মণ পুরোহিত শিব লিঙ্গের সামনে পূজা করছেন; ছাতা মেরামতকারী ভাঙা হাতল ঠিক করছেন; সাঁওতাল আদিবাসী পুরুষরা ঢোলের সাথে নাচছে; গ্রামীণ বাঙালি পুরুষ ও মহিলারা ঘরে জ্বালানি কাঠ নিয়ে যাচ্ছে; একজন লোহার ঢালাইকারী তার নৈপুণ্যে কাজ করছে; একজন মানুষ তুলো দিয়ে দড়ি তৈরি করছে; এবং মঞ্জিরা ও ঢোল নিয়ে পুরুষ ও মহিলা ভক্তরা কীর্তনে অংশগ্রহণ করে।

পুতুলগুলি গঙ্গা নদীর মাটি দিয়ে তৈরি করা হয় (সম্প্রতি জাতীয় নদী হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে), যাকে "ইটেল" বলা হয়, জোয়ার কমে গেলে অবশিষ্টাংশ। কৃষ্ণনগরের (নদিয়া জেলায়) মাটির পুতুলগুলি তাদের দৈনন্দিন গ্রামের জীবন- মাছ ধরা, কৃষিকাজ, ন্যাকড়া তোলা, ঝুড়ি তৈরি, রান্না করা, পরিষ্কার করা এবং পূজা করা ইত্যাদির জন্য বিখ্যাত - এবং ফল, শাকসবজি, পাখি এবং প্রাণীর মতো বিষয়গুলি . তারা পাঁচ প্রজন্মেরও বেশি সময় ধরে দেশীয় কুমোরদের উত্তরাধিকারের অংশ।

চমত্কারভাবে কারুকাজ করা, এই মাটির পুতুল এবং বিভিন্ন আকারের মূর্তিগুলি তাদের চারপাশের জীবনের বাস্তব-জীবনের বর্ণনা দিয়ে সমর্থক এবং সাধারণ মানুষকে একইভাবে আনন্দিত করেছে। দেব-দেবীর মূর্তি, খড়ের ঘর ও তালগাছের বাংলার গ্রামীণ দৃশ্য, মুচি, পুরোহিত, ক্ষুদ্র এস্কিমো, পাখি, প্রাণী, ফল, শাকসবজি ইত্যাদির প্রতিলিপি সূক্ষ্মতা ও পরিপূর্ণ শৈল্পিকতার সঙ্গে করা হয়েছে। এই পরিসংখ্যানগুলির বিশদ বিবরণ, বিশেষত তাদের পোশাক এবং আনুষাঙ্গিকগুলি সেই একক বা ডাবল প্লিট তৈরি করার জন্য সরঞ্জামগুলির দ্বারা আনা হয়, এখানে এবং সেখানে একটি ক্রিজ এবং কয়েকটি স্ট্রোকের মাধ্যমে, জীবন তাদের চোখে মিশে যায়।এই নৈপুণ্যের সাথে জড়িত মডেল তৈরি সম্পূর্ণরূপে কারিগরের হাতের দক্ষতার উপর নির্ভর করে । বিভিন্ন ধরণের মডেল রয়েছে - ভলিউমের উপর নির্ভর করে সেগুলিকে ছোট, মাঝারি এবং বড় হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে।

গুরুত্ব: এগুলি স্থানীয় মেলা এবং আন্তর্জাতিক বাজারে জনপ্রিয়।


  



কাঁথা সেলাই: গ্রামীণ নারীদের সূক্ষ্ম শৈল্পিক দক্ষতা

ইতিহাস:

কাঁথার উৎপত্তি বাংলার গ্রামীণ এলাকায়। প্রাচীনকাল থেকেই বাঙালি গৃহিণীরা পুরোনো কাপড় পুনর্ব্যবহার করে সূচিশিল্পের মাধ্যমে কাঁথা তৈরি করতেন।

কাঁথার উল্লেখ প্রথম পাওয়া যায় কৃত্তিবাসী রামায়ণ-এ।

ঊনবিংশ শতকে কাঁথার নকশা স্থানীয় মেলার গণ্ডি পেরিয়ে বাণিজ্যিক বাজারে পৌঁছায়।

উল্লেখযোগ্য উদাহরণ:

1. নকশি কাঁথা (মুর্শিদাবাদ):

এই কাঁথায় ফুল, লতা-পাতা, এবং জীবনের গল্প সূচিকর্মে ফুটিয়ে তোলা হয়।

বিশেষত্ব: প্রতিটি নকশি কাঁথা একটি জীবন্ত গল্প।

2. শাড়ি ও পোশাকে কাঁথা সেলাই (বীরভূম, নদিয়া):

শাড়ি, ওড়না, এবং পোশাকে কাঁথার নকশা আন্তর্জাতিক ফ্যাশনে ব্যবহৃত হয়।

বিশ্বের পরিচিতি: ভারত এবং বিদেশের বাজারে এটি বাঙালির পরিচিতি বহন করছে।



কালীঘাট চিত্রকলা: বাংলার পটচিত্রের নতুন দিগন্ত

ইতিহাস:

কালীঘাট চিত্রকলার সঠিক উৎসটি শিল্প সমালোচক এবং ইতিহাসবিদদের মধ্যে বিতর্ক এবং অনুমানের বিষয়, কারণ এমন কোনও ঐতিহাসিক বিবরণ নেই যা একটি নির্দিষ্ট তারিখ লিপিবদ্ধ করে বা এই ধরণের চিত্রকলার সূচনা চিহ্নিত করে, যা কালীঘাটে পটুয়াদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পেইন্টিংগুলিতে ব্যবহৃত কাগজের ধরন এবং রঙের মতো উপাদান প্রমাণ থেকে বোঝা যায় যে সেগুলি ১৯ শতকের প্রথমার্ধের অন্তর্গত।  বিভিন্ন ইউরোপীয় সংগ্রাহকদের দ্বারা এই চিত্রগুলি অধিগ্রহণের তারিখগুলি উল্লেখ করে, ঐতিহাসিকরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে চিত্রগুলির আবির্ভাব মোটামুটিভাবে 19 শতকের প্রথম বা দ্বিতীয় চতুর্থাংশে কালীঘাটে বর্তমান কালী মন্দিরের প্রতিষ্ঠার সাথে মিলে যায়। ভিক্টোরিয়া এবং আলবার্ট মিউজিয়াম ওয়েবসাইট উল্লেখ করে, উদাহরণস্বরূপ, জাদুঘরের শিল্পকর্মগুলি "১৮৩০ থেকে ১৯৩০ এর দশকের ১০০ বছরের মধ্যে তৈরি এবং সংগ্রহ করা হয়েছে"।  যাইহোক, এস. চক্রবর্তী অনুমান করেন "কালীঘাটের চিত্রকর্ম ১৮৫০-এর দশকের আগে প্রচলিত ছিল না"।কালীঘাট চিত্রকলার উত্থান উনিশ শতকের কলকাতায়, কালীঘাট মন্দিরের আশপাশে। মূলত পটচিত্র থেকে উদ্ভূত, এই চিত্রকলার মধ্যে দেবদেবীর চিত্র, সামাজিক কাহিনি, এবং বিদ্রূপাত্মক বিষয়বস্তু স্থান পেয়েছে।

১৮০০-১৮৫০: প্রাথমিক পর্যায়ে দেব-দেবীর ছবি আঁকা হতো।

১৮৫০-১৯০০: সামাজিক বিদ্রূপ এবং ব্রিটিশ শাসনের সমালোচনা ফুটে ওঠে।


অঙ্কন পদ্ধতি: পটুয়ারা তাদের পরম্পরাগত জ্ঞান থেকে প্রকৃতি থেকেই নানা রঙ আহরণ করে।

১.হলুদ রঙ সংগৃহীত হয় হলুদ বা আলামাটি থেকে বা হলুদ গাছের শিকড় থেকে।

২.সবুজ রঙ সংগৃহীত হয় শিমপাতা বা হিঞ্চে শাকের রস থেকে। বেলপাতা শুকিয়ে গুঁড়ো করওে তৈরি হয় সবুজ রঙ।

৩.বেগুনি রঙ তৈরি হয় জাম বা পাকা পুঁই মুচুড়ি থেকে।

৪.নীল রং তৈরি হয় অপরাজিতা ফুল বা তুঁত থেকে।

৫.খড়িমাটির সঙ্গে সামান্য নীল মিশিয়ে তৈরি হয় সাদা রঙ।

৬.খয়েরি রঙ তৈরি হয় চুন বা আলামাটির সঙ্গে খয়েরের টুকরো মিশিয়ে।

৭.লালচে রঙ তৈরি হয় পোড়ামাটি বা লাল গিরিমাটি থেকে। পাকা তেলাকুচা থেকে পাওয়া যায় লাল রঙ। সজনে গাছের পাতা বেটে লাল রং তৈরি করা যায়।

৮.কালো রঙের জন্য পোড়ামাটির গা থেকে চেঁছে নেওয়া হয় ভুষোকালি। গাব গাছের শিকড় পুড়িয়েও তৈরি হয় কালো রঙ।



উল্লেখযোগ্য উদাহরণ:

1. দেবদেবীর চালচিত্র:

 চালচিত্র হল সাবেকি দুর্গা প্রতিমার উপরিভাগে অঙ্কিত দেবদেবীর কাহিনিমূলক পটচিত্র, যা প্রধানত অর্ধগোলাকৃতি হয়।এটি দুর্গাচালা বা দেবীচাল নামেও পরিচিত। এই চিত্রকলার একটি নিজস্ব রূপরেখা ও শৈলীগত দৃঢ় বুনিয়াদ রয়েছে। শিল্পীদের ভাষায় এই চালচিত্র হল ‘পট লেখা’, যা বাংলার পটচিত্রেরএকটি বিশেষ ধারা।চালচিত্রের মূল বিষয়বস্তু হল শিবদুর্গা, কৈলাস, শিব অনুচর নন্দীভৃঙ্গী, মহিষাসুর বধ, দশাবতার ইত্যাদি। বীরভূম জেলার হাটসেরান্দির সূত্রধর সমাজে এই ধরনের এক বিশেষ চিত্রসম্ভার দেখা যায়, যাকে দুর্গা পট বলা হয়। তবে এখানে দুর্গা প্রতিমার বদলে দুর্গা পটেই পূজার্চনা করা হয়। দুর্গা পটের উপর অর্ধবৃত্তাকার চালচিত্র থাকে। এই ধরনের চালচিত্রে রাম, সীতা, শিব, নন্দীভৃঙ্গী, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শুম্ভ-নিশুম্ভ অঙ্কিত থাকে। কৃষ্ণনগররাজবাড়ির রাজরাজেশ্বরী দুর্গার চালচিত্রের মধ্যে অনন্যতা লক্ষ্য করা যায়। এখানকার চালচিত্রে মাঝখানে থাকে পঞ্চানন শিব ও পাশে পার্বতী, তার একপাশে থাকে দশমহাবিদ্যা ও অন্য পাশে দশাবতার। ভারতীয় সংগ্রহালয়ের প্রাক্তন অধিকর্তা বলেছেন- "বাংলায় বিভিন্ন ধরনের চালচিত্রের প্রয়োগ আছে ও তাদের মধ্যে বিভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। মঠচৌরি চালির চালচিত্রে দেবীর অবয়বগুলি থাকে উপর থেকে নিচে, একটির নিচে অপরটি। আবার সাবেক বাংলা চালিতে সেগুলো থাক থাক করে আলাদা আলাদা ভাবে থাকে। অন্য দিকে, মার্কিনি চালিতে পটচিত্রগুলি থাকে পাশাপাশি।"

                              

2. সামাজিক বিদ্রূপাত্মক চিত্র:

সবচেয়ে আলোচিত ও বহুল চর্চিত এই কালীঘাটের পট। শীতল মনোরম হস্ত কৌশলে অপূর্ব ছন্দ ভাবের প্রকাশ এই পট। প্রায় বৃত্তের ব্যাসের অভগ্ন ছাঁচে মোটা কালো রেখার নিখুঁত লম্বা টানে ফুটে উঠতো নারীর শান্ত ভাব বা উত্তেজক কামনীয় রূপ। পুরুষ দেহে গতিশীল শক্তি বা ভগ্নরূপ। কাঁধে শাল, বকলস আঁটা জুতো, ধুতি-পাঞ্জাবি পরা, বাবরি চুল, পটলচেরা চোখ, ধনুকাকৃতির ভ্রূ নিয়ে ‘বাবু পট’ হলো মূল আকর্ষণ। এ পটে থাকে সৌখিন চেয়ার, হুঁকো, তন্বি মেয়ে, নাটকের মঞ্চ-সহ অনুসঙ্গিক নানা ধরনের বা চরিত্রের খণ্ড দৃশ্য। মূর্তির রেখাগুলির গভীরতা ফুটিয়ে তোলার জন্য মূর্তির পেছনে অন্ধকার পরিবেশ তৈরি করা হতো,যেন রাতের অন্ধকার। আর আলোর মধ্যে অন্তরঙ্গ লাবণ্য ও বাবু সংস্কৃতির ক্ষয়িষ্ণু অবস্থা বা যৌনতা। রানির মুকুট যেমন সৌন্দর্য বাড়িয়েছে, তেমনি ইঁদুরের মাথায় বিবির পা বা সাপের মাথায় ব্যাঙের নাচন দৃশ্য বেশ হাসির উদ্রেক করে। নানা চরিত্র কালীঘাট পটের বিষয় হয়েছে। মন্দির দর্শনে আসা ভক্তদের জন্য তৈরি হয়েছে হিন্দু দেবদেবী ও পৌরাণিক বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে কিছু পট। যেমন রাসলীলা, কৃষ্ণলীলা, শিব-পার্বতী, কালী, নরসিংহ অবতার, কাকের পিঠে কৌমারী। পটের বিষয় হিসাবে ধর্মকথার বাইরে ঐতিহাসিক বিষয়ও গুরুত্ব পেয়েছে। যেমন লক্ষ্মীবাঈ, শ্যামাকান্তের বীরত্ব, শের খাঁ ও বাঘের লড়াইসহ নানা ঘটনা। সামাজিক বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে সাহেব পাড়া ও দেশি পাড়ার নানা ছবি। যেমন সতীর দেহত্যাগ, মাছকাটা, বর-কনে, স্ত্রৈণ স্বামী, মদ্যপ স্বামীর অত্যাচার, বাবু-ভণ্ডদের বেলাল্লাপনা, বিবি সুন্দরী, সাহেব, গোরা সৈন্য। নানা চরিত্র নিয়ে নানা ব্যঙ্গ দৃশ্য তুলে ধরে সমাজ সচেতনতার চেষ্টা। আর শিশুদের নজরে পড়ার জন্য তৈরি হয়েছে পশু-পাখির নানা ছবি। ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে সাপের ব্যাং শিকার, বিড়ালের মাছ বা পাখি শিকার কিংবা লব-কুশের হাতে বন্দি হনুমান। তৈরি হয়েছে শিয়াল রাজার গল্প-চিত্র। অর্থাৎ নানা বিষয়।

উদাহরণ: ব্রিটিশ আমলের "বাবু কালচার" বা স্ত্রী-পুরুষের সম্পর্কের বিদ্রূপ।


         


3. আধুনিক কালীঘাট পেইন্টিং:

আধুনিক শিল্পীরা এই ধারা পুনরুজ্জীবিত করেছেন। আজকাল পেইন্টিং, গৃহসজ্জার সামগ্রী এবং ব্যাগে এই নকশা ব্যবহার হচ্ছে।

বাংলার কারুশিল্পের বৈশিষ্ট্য ও ভবিষ্যৎ

বাংলার এই তিনটি শিল্প আমাদের ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতিটি শিল্পকর্ম বাংলার গ্রামীণ জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

1. টেরাকোটা শিল্পের জন্য:

অযোধ্যার রামমন্দিরের প্রবেশপথে বসানো হয়েছে রামায়ণে বর্ণিত বিভিন্ন ঘটনার ২০০টি ম্যুরাল। যেগুলি তৈরি হচ্ছে পাথর, সিমেন্ট, সেরামিক টাইল, ফাইবার ও পোড়ামাটি দিয়ে। এর মধ্যে ১০০টি ম্যুরাল টেরাকোটার তৈরি। সেই কাজটিই করেছেন কৃষ্ণনগরের শিল্পী বিশ্বজিৎ। কাজের তদারকি করার জন্যই গত কয়েক মাস ধরে তাঁকে অযোধ্যা আর কৃষ্ণনগরের মধ্যে ছুটে বেড়াতে হয়েছিল। প্রাথমিক ভাবে মাটির কাজ থেকে পোড়ানোর কাজ পর্যন্ত হচ্ছে কৃষ্ণনগরের বেলেডাঙায় বিশ্বজিতের স্টুডিয়োয়। তার পরে সেগুলি টুকরো আকারে চলে যায় অযোধ্যায়। সেখানে রামমন্দিরের প্রবেশপথ, যার নাম দেওয়া হয়েছে ধর্মপথ, তার দু’ধারে বসানো হয়েছে এই কাজ। এই কাজে বিশ্বজিৎকে সাহায্য করছেন ২৭ জন সহযোগী শিল্পী।স্থানীয় কারিগরদের অর্থনৈতিক সহায়তা।আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে তাদের কাজ তুলে ধরা।

2. কাঁথা সেলাইয়ের জন্য:

কাঁথা সেলাই শিল্পীদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি।

আন্তর্জাতিক ফ্যাশনে এর আরও ব্যবহার।

3. কালীঘাট চিত্রকলার জন্য:

আধুনিক শিল্পকলার সঙ্গে এই ধারার সংমিশ্রণ।

ক্যালেন্ডার, গৃহসজ্জার পণ্য এবং পোশাকে কালীঘাট নকশার প্রয়োগ।

উপসংহার

বাংলার টেরাকোটা, কাঁথা, এবং কালীঘাট চিত্রকলা শুধু শৈল্পিক দক্ষতার নিদর্শন নয়; এগুলি বাংলার ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং মানুষের জীবনের গভীরতম গল্প বলে। এই শিল্পগুলিকে সংরক্ষণ ও প্রসারিত করা আমাদের দায়িত্ব, যাতে আগামী প্রজন্মও বাংলার এই গৌরবময় ঐতিহ্য জানতে পারে।





Psychological Flow While Reading Books: Exploring the Reader's Journey Through Bengali And English Classics and Poetry

  বই পড়ার সময় মনস্তাত্ত্বিক প্রবাহ: বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্যের প্রভাব এবং পাঠকদের মানসিক জগৎ ভূমিকা: বই পড়া মানেই কেবল গল্প বা জ্ঞান আহরণ ন...